Homeopathic medicine for dandruff.
খুশকির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা –
খুশকি কি ?
খুশকির সমস্যায় নারী-পুরুষে ভেদ নেই। খুশকি নিয়ে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী কিংবা যুবক-যুবতী সবাইকে দেখা যায় উশখুশ করতে। চুলের খুশকি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা অনেকের কাছেই যেন অসাধ্য। খুশকি বা খুসকি মূলত মাথার লোমকূপ সমূহতে ময়লা জমে ও ছত্রাকের আবির্ভাবের কারণে হয়ে থাকে এবং খুশকি সমস্যার প্রধান শত্রু হলো ডিরমট্রিস সেবেরিক। মূলত খুশকি সমস্যার প্রাদুর্ভাব ঘটে মাথার ত্বকের উপরের অংশে। এছাড়া মুখে এবং কানে ইহা দেখা যায়। এমনকি ঠোটে, নাকের ছিদ্র থেকে শুরু করে কপাল, ভ্রুতেও ইহা দেখা যেতে পারে। রোগটি আক্রান্ত ত্বকের শুষ্কতা কমে যায় এবং শুষ্ক ত্বকের ছোট ছোট মৃত ত্বক খুসকি তৈরিতে সহায়তা করে। তবে ত্বকের শুষ্কতার কারণ যদি খুসকি হয় তবে সহজেই বোঝা যায় কারণ চুল বাদে অন্য যে কোন ত্বকেই খুশকি হোক না কেন তা সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে। সাধারনত খুশকি একজন মানুষের বয়ঃসন্ধি কালীন সময়ে বা প্রাপ্তবয়স্ক হবার সময় দেখা যায়। মাথার চামড়ায় খুশকি হলে ছোট ছোট আঁশের মতো মরা চামড়া উঠতে থাকে ফলে মাথার চামড়া চুলকায় এবং চিরুনি দিয়ে যখন চুল আচড়ানো হয় তখন খুশকি গুলি মাথার চুল থেকে ঝরতে থাকে। খুশকি মাথা থেকে কাঁধে বা জামায় পরে একজনের শ্রীহানি ঘটায়। মাথা যখন খুশকিতে আক্রান্ত তখন যদি মাথা চুলকানো হয় তখন ভালো অনুভূত হয় বিধায় খুশকি আক্রান্ত একজন ব্যক্তি সর্বদা মাথা চুলকাতে থাকে এবং তার মাথা থেকে মরা চামড়া ঝরতে থাকে। মূলত আমরা খুশকি বলতে মাথার খুশকিকেই বুঝিয়ে থাকি তবে শুধুমাত্র খুশকির মাত্রা বেশী হলেই শরীরে অন্যান্য অঙ্গে এটার পাদুর্ভাব দেখা যায়। খুশকি অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগ এবং এলার্জি ঘটাতে পারে।
খুশকির কারণ
যে সব কারণে খুশকি হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো
√ মাথার ত্বকের শুষ্কভাবের কারণে খুশকি হয়ে তাকে। শীতকালে যখন আবহাওয়াতে আর্দ্রতা কম থাকে তখন ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। শীতকালে ঘরের অভ্যন্তরের ঠান্ডা বাতাস এবং ঘরের বাইরের তুলনামূলক গরম বাতাসের ফলে তাপমাত্রার অসামাঞ্জস্যাতার সৃষ্টি হয় এবং সে কারণে গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে খুশকি হয়ে থাকে।
√ কোন ব্যক্তি যদি দিনের বেলায় খুব অল্প সময় চুল আচড়ান, তবে তার মাথায় মৃত ছোট ছোট চামড়া গুলি জমতে থাকে এবং খুশকি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
√ যাদের ত্বক এলার্জেটিক তাদের খুশকির প্রবনতা বেশী। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি ও ত্বক এক অপরের সহিত বিপরীত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে খুশকি উৎপাদন করতে পারে।
√ পর্যাপ্ত পরিমান শ্যাম্পু না করলে মাথার ত্বক অপরিষ্কার হয়ে পড়ে যা থেকে খুসকির উৎপত্তি হতে পারে।
√ খাদ্যভাসের কারণেও খুশকি হতে পারে। মূলত ভিটামিন বি ও জিংক গ্রহণ না করলে খুশকি হয়।
√ ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের ছত্রাকের কারণে খুশকি হতে পারে। মূলত এই ছত্রাকটি সকলের ত্বকেই কম আর বেশি থাকে। এটি সাধারনত কোন সমস্যার সৃষ্টি করে না। কিন্তু এটির পরিমাণ ত্বকে যখন বেশি হয়ে যায় তখন তা ত্বক থেকে তেল শুষে নেয় এবং ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। ফলে অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ উৎপাদিত হতে থাকে এবং বেশী সংখ্যাক কোষ মৃত হতে থাকে এবং কোষ গুলি মারা গেলে তা চুলের তেলের সাথে মিশে খুশকির সৃষ্টি করে।
√ যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন তাদের মধ্যে খুশকির প্রবনতা বেশী।
√ কিছু বিশেষ রোগ যেমন পার্কিন্সন, হৃদরোগ, স্টোক খুশকির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
√ ত্বকের নানা সমস্যার কারণে।
√ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের খুশকি হয়ে থাকে।
√ চুলকানির ফলে যে ঔষধ ব্যবহার করা হয় সে ঔষধের পত্রিক্রিয়ায় খুশকির উদ্ভব হতে পারে।
খুশকির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাায় ব্যবহৃত ঔষধ নির্বাচন লক্ষণ:
ধাতু বিচারপুর্বক নিম্নলিখিত ঔষধাবলীতে উপকার পাওয়া যায়, যথা- আর্সেনিক এলবাম, ব্যারাইটা কার্ব, ব্রায়োনিয়া, ফ্লোরিক এসিড, গ্রাফাইটিস, ক্যালি সালফ, লাইকোপোডিয়াম, নেট্রাম মিউর, সিপিয়া, সালফার আয়োড, থুজা ইত্যাদি।
খুশকির হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ নির্বাচন কৌষল-
কলচেরিয়া:
মাথার চুলের গোড়ায় সাদা গমের ভুসির মত খুস্কিতে ইহা উপকারী।
স্যানিকিউলা:
নিম্ন গতিতে ভয়, গরমে কাতর, ক্রদ্ধ মেজাজ, এই প্রকৃতির রোগীর চক্ষুর ভ্রু, দাড়ি বা গোফে খুস্কির একটি উত্তম ঔষধ।
আর্সেনিক এলবাম:
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পছন্দকারী সৌখিন, শীত কাতর, মাথায় ঠান্ডা জলে আরাম বোধ, রোগীদের মাথার চুলের গোড়ায় খুস্কি পড়ায় একটি মহৎ উপকারী ঔষধ।
সালফার:
অপরিস্কার, অপরিচ্ছন্ন, নোংরা চর্ম পীড়া গ্রস্হ রোগীদের শরীরের বিভিন্ন স্হানে খুস্কিতে ইহা উপকারী।
নেট্রাম মিউর:
একটুতেই ঠান্ডা লাগে, খিটখিটে মেজাজ ঘার ও গলা দ্রুত শুকিয়ে যায়। সামান্য কারণে কাদতে থাকে। বলিকাদের রক্ত শুন্যতার কারণে মাথার ব্যাথা, মাথা বেদনার পূর্বে চোখে ঝাপশা দেখা। মানচিত্রের মত ফাটা ফাটা জিহ্বা। জিহ্বার ধার গুলোতে দাদের মত দাগ। কোষ্ঠবদ্ধ রোগী, ভীষন লবস প্রিয় রোগীর মাথায় একজিমা ও খুশকিতে ন্ট্রোম মিউর উপযোগী।
গ্রাফাইটিস:
যে সকল মহিলারা মোটা হতে থাকে কিন্তু দেহে বর থাকে না। কোষ্ঠবদ্ধ মর, ঋতু কম চামড়া মোটা, চর্মরোগে চটচটে রস ঝড়ে এই রমনীদের মাথার খুশকিতে প্রয়োজনীয় ঔষধ।
রেপারটরির সাহায্যে খুশিকির সদৃশ ঔষধ নির্বাচন
Dandruff (seborrhœa) — Arn. m., Ars., Bar. c., Branca, Bry., Fluor. act., Graph., Hep., Heracl., Iod., Kali s., Lyc., Nat. m., Phos., Sanic., Sep., Sul., Sul. iod., Thuya.
বাইওকেমিক চিকিৎসা
নেট্রাম সালফ:
মাথার চুলের গোড়ায়, দাড়িতে ভ্রুতে খুস্কি পড়ার উত্তম কার্যকরী ঔষধ।
ক্যালি সালফ:
মাথায়, মুখে, হাতের তলায় বা শরীরের বিভিন্ন স্হানে খুস্কি। শুস্ক চর্ম উঠার ইহা মহৌষধ।
উপসংহার
খুশকি নিরাময়ে ঘরোয়া সমাধান
জলপাই তেল- খুশকির সমস্যা দূর করতে জলপাই তেল বা অলিভ অয়েলের ব্যবহার নানা দেশে খুবই জনপ্রিয়। নিয়মিত জলপাই তেল ব্যবহারে খুশকি কমে। কারণ জলপাই তেল প্রাকৃতিক ভাবেই ভালো ময়েশ্চারাইজার এবং ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে বা ত্বকের আর্দ্রতা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে।
বর্তমান বাজারে পাওয়া যায় ডক্টর হেয়ার অয়েল, সৌদি আরব কেমিক্যাল কোম্পানির প্রেডাক্ট। গোসলের সময় এই তেল ব্যবহার করে শ্যামপু করে নিন 7দিনের মধ্যে খুকশী দূর হবে
কর্পূর ও নারকেল তেল- নারকেল তেল ও কর্পূরের তেল নানা ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। আধা কাপ নারকেল তেলের মধ্যে এক চা-চামচ কর্পূরের তেল নিয়ে একটা বোতল বা পাত্রে রাখুন। খেয়াল রাখতে হবে যাতে বোতলের মুখ ভালো করে লাগানো থাকে বা পাত্রটির ঢাকনা ঠিকঠাক আটকানো থাকে, যাতে ভেতরে বাতাস না ঢোকে। শুষ্ক স্থানে এভাবে রাখা পাত্র থেকে কিছুটা তেল নিয়ে প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথায় দিন। মিনিট দশেক ধরে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় মাখুন। সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে টানা দুই সপ্তাহ ব্যবহার করে উপকার পেলে ধীরে ধীরে এটা একদিন পর পর মাখুন বা আরও কমিয়ে দিন।
বেকিং সোডা- হালকা পানিতে মাথা ভিজিয়ে নিয়ে খানিকটা বেকিং সোডা পুরো মাথায় মেখে নিন। ভালো করে ঘষে ঘষে শ্যাম্পু না করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা মাথার খুলিতে থাকা ছত্রাক দমন করে প্রথমদিকে ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলতে পারে। কিন্তু অল্পদিনেই ত্বকে স্বাভাবিক তৈলাক্ত অবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু এ সময়ে আপনি খুশকি থেকে মুক্তি পাবেন।
লেবুর রস- দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে পুরো মাথায় চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে মাখুন। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এবার এক টেবিল-চামচ লেবুর রস নিয়ে এক কাপ পানিতে মেশান। লেবুর রস মেশানো পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। খুশকি না কমা পর্যন্ত প্রতিদিন এভাবে লেবু চিকিৎসা চালিয়ে দেখতে পারেন।
ঘৃতকুমারী- খুশকি ভরা মাথায় ঘৃতকুমারীর রস মেখে নিলে দারুণ আরাম পাবেন। খুশকির জ্বালায় দিনরাত চুলকানো থেকে খানিকটা ছুটিও দেবে ঘৃতকুমারীর রসের শীতল আরাম। এই উদ্ভিদ রসের সমৃদ্ধ উপাদানগুলো আপনার ত্বকের অনেক সমস্যাই দূর করবে।
মেথির তেল- সাধারণ নারকেল তেলের সঙ্গে মেথি মিশিয়ে কয়েকদিন বোতলে রেখে দিন। নিয়মিত এই মেথি মেশানো তেল মাখুন মাথায়। রাতে মেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে মাথার চুল ও ত্বক দুইই ভালো থাকবে। খুশকি থেকেও রেহাই পাবেন।
লবণ- প্রতিদিনই কাজে লাগা লবণের অনেক ব্যবহারই হয়তো আমরা জানি না। মাথায় হালকা করে লবণ ব্যবহার করে দেখুন। প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে লবণ খুশকি দূর করতে দারুণ কাজ করবে। হালকা করে লবণ ব্যবহার করে তারপর শ্যাম্পু করলে শ্যাম্পুর পুরো সুবিধা আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। এ ছাড়া চুলকাতে থাকা খুশকি ভরা মাথায় লবণ-চিকিৎসা দারুণ প্রশান্তিও দেবে আপনাকে।
———–
ডাঃ আরিফুল ইসলাম আদনান সামি
চেম্বার, সৈয়দ হোমিও হল।
সৈয়দ হোমিও হল ফরেস্ট রোড আলিয়া মাদ্রাসা মার্কেট শেরপুর বগুড়া।
কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন অনলাইনে বা সরাসরি চেম্বারে।
01721418696
01797152527
01934981471