আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও একটা ধারণা রয়েছে যে, হোমিও ডাক্তাররা ২০ টাকা ৩০ টাকার ট্রিটমেন্ট দিবেন আর Impotence, kidney failure, liver cirrhosis বা liver cancer, Ovarian cancer, Ovarian cyst ইত্যাদি জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষরা তাতেই ভালো হয়ে যাবেন । অথচ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই গুলির চূড়ান্ত কোনো কার্যকর ট্রিটমেন্টই নেই ।
দেখা যায় অনেকে জটিল রোগসমূহের ক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথি ট্রিটমেন্ট নিতে নিতে নিজের জায়গা সম্পত্তি, ঘর বাড়ি বিক্রি করে নিঃস হয়ে শেষে হোমিও ডাক্তারদের কাছে আসেন । অ্যালোপ্যাথির ক্ষেত্রে ওই ট্রিটমেন্টগুলি নিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাখ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায় অথচ রোগীরা তখন কিছুই বলেন না কারণ অ্যালোপ্যাথরা ডাক্তার কিন্তু যখন এতো টাকা খরচ করার পরেও কোনো ফল না পেয়ে অবশেষে কোন হোমিও ডাক্তারের কাছে আসেন তখন হোমিওপ্যাথ যদি রোগীর ক্রিটিকাল অবস্থার আলোকে বিশুদ্ধ বিদেশী ঔষধ দিয়ে ট্রিটমেন্ট দেন এবং তার জন্য কয়েক মাসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে মাত্র ২’০০০ থেকে ৩’০০০ ( দুই থেকে তিন হাজার ) টাকা খরচ পড়ে তখন মনে হয় হোমিও ডাক্তাররা প্রতারক, তারা খারাপ, তারা ঠক, তারা কেন ২’০০০ টাকা নিবেন ? তাদের ২’০০০ টাকা নেয়ার অধিকার কি ???? অথচ এখানে ঔষধের বাজার মুল্য রয়েছে সাথে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের ক্রেডিটও রয়েছে যেটা অর্জন করতে তার বছরের পর বছর সময়ে লেগেছে – এই বিষয়টি কেউ চিন্তাও করেন না ।
আসলে হোমিও ডাক্তার, ডাক্তার না !!!! এটাই ধারণা এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ।
যারা এইরূপ ধারণা করেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি :-
আমরা দেখেছি অনেকেই বিষয়টি না জেনে এই রকম ধারনা করেন । তার বেশ কিছু কারণও আছে । আজ একটা কমেন্ট দেখলাম যিনি আধুনিক যুগে হোমিও ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই রাখেন না ( হোমিও ঔষধ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখেন ) কিন্তু বিস্তৃত বিষয়টা না বুঝেই একটা মন্তব্য করে বসলেন । আমরা বলব না যে, এটা তার দোষ । বিরোধী পক্ষের অপপ্রচার আর কতিপয় অসাধু হোমিও ডাক্তার ও কিছু অসাধু হোমিও ঔষধ ব্যবসায়ীদের ফলেই মানুষের মনে এমন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে । তাই আজ এই নোটটি লিখলাম ।
বিখ্যাত ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক এবং বিশেষজ্ঞ ডঃ মাইকেল ব্রুক্সের মতে, ফ্রান্সের ৪০ শতাংশ চিকিৎসক হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করেন৷ ব্রিটেনে ৩৭ শতাংশ এবং জার্মানির ২০ শতাংশ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক নিজেদের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথির ব্যবহার করেন ৷ ১৯৯৯ সালে চালানো এক সমীক্ষা অনুযায়ী, হোমিপ্যাথির জন্য কোনও বিমা পরিষেবা না থাকা সত্ত্বেও আমেরিকার ৬০ মিলিয়ন মানুষ তখন হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করত৷ তাদের সংখ্যা এখন আরও অনেক বেড়ে গেছে ৷
আগে নিচের লিংকটাতে ভিসিট করে আর্টিকেলটা যদি একবার পড়ে নেন আশা করি বিষয়টা বুঝতে আপনাদের আরো সুবিধা হবে ।
মনে রাখা উচিত অ্যালোপ্যাথি আর হোমিওপ্যাথি চিকিত্সার মধ্যে পার্থক্য হলো শুধু মেডিসিনের প্রয়োগ । হোমিওপ্যাথির DHMS ডিগ্রী নিতে হলেও আপনাকে ৪ বছর পড়াশোনা করতে হবে তারপর আবার ইন্টার্নি রয়েছে । বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের তথ্যানুসারে দেশে DHMS করার জন্য ৩৮ টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে । ৪/৫ বছর পড়াশোনা করে ডিগ্রী নিলেই আপনি হোমিও ডাক্তার হয়ে যাবেন কাগজে কলমে কিন্তু আপনাকে একজন যথার্থ হোমিও ডাক্তার হতে আরো ৮-১০ বছর চেষ্টা চরিত্র করতে হবে । আপনি বিশ্বাস করেন বা না করেন সেটা আপনার বিষয় ।
এমন অনেক হোমিও ডাক্তারদের আমরা দেখেছি যারা অনেক সময় রোগীদের চেহারা দেখেই ট্রিটমেন্ট দিয়ে দেন এবং রোগীরাও সুস্থ হয়ে উঠেন । আবার এমন ডাক্তারও রয়েছেন তারা রোগীদের ২/১ প্রশ্ন করেই বুঝে ফেলেন সমস্যাটি কোথায় তখন বিস্তর কোন প্রশ্ন করেন না । আল্লাহতালা একেক জন ডাক্তারকে একেক রকম হাতযস দিয়েছেন ।
হোমিও ঔষধ প্রসঙ্গে :-
লিকুইড হওয়ার কারণে বাংলাদেশী ঔষধ ব্যবসায়ীদের কাছে বিশুদ্ধ ঔষধটা পেতে বেশ কষ্ট হয়ে যায় । এই কারণে আমরা সরাসরি জার্মানি থেকে আমদানিকৃত পেটেন্ট মেডিসিন ফাইল ক্রয় করে থাকি যাতে বিশুদ্ধতা নিয়ে আমাদের মনে সন্দেহ না থাকে । তাই সরাসরি আমরা প্রেসক্রিপসন না করে রোগীদের ক্ষেত্রে আমাদের ক্রয়কৃত বিদেশী এবং বিশুদ্ধ ঔষধগুলি প্রয়োগ করে থাকি । বলে রাখা ভালো, এখন হোমিও ঔষধের মুল্যও অনেক বেশি ।
আপনারা অনেক হোমিও ডাক্তারই পাবেন, তারা আপনাকে বলে দিবে কি কি ঔষধ খেতে হবে । তাদের কাছ থেকে ট্রিটমেন্ট নিয়ে একবার দেখতে পারেন আপনার জটিল রোগ আদৌ সারে কি না । যাদের ঔষধের নাম দরকার তারা ঔসব হোমিও ডাক্তারদের কাছে যাবেন । কিন্তু আমাদের কাছে কেউ চিকিত্সা নিতে আসলে আমরা প্রেসক্রিপসন না করে সরাসরি আমাদের ক্রয়কৃত বিদেশী ঔষধ দিয়ে ট্রিটমেন্ট দেই । কারণ জটিল রোগীদের পর্যবেক্ষণে রেখে হোমিও ট্রিটমেন্ট দিতে হয় ।
তাছাড়া আমরা এমন এক দেশে বাস করি ভাই, যেখানে রোগীরা যে ঔষধটা একটা দোকান থেকে কিনবেন সেটা বিশুদ্ধ কি না তার কোনো নিশ্চিয়তা নেই । দেখা যায় একজন অভিজ্ঞ হোমিও ডাক্তার খুব ভালো মানের ট্রিটমেন্ট দেয়া সত্তেও শুধু মাত্র তার করা প্রেসক্রিপসন অনুসারে ভেজাল মেডিসিন কিনে খাওয়ার কারণে রোগীরা ভালো হচ্ছেন না, আর সাথে সাথে ঐ ডাক্তারের গুষ্ঠিশুদ্ধ উদ্ধার করতেও রোগীরা তখন কার্পন্য করেন না । তাই আমরা সেই রিস্ক নিতে মোটেও রাজি নই ।
আমাদের সম্মানিত হিতাকাঙ্ক্ষী বৃন্দ,
আমরা হোমিও ডাক্তার, অভিজ্ঞ হোমিও ডাক্তার এবং জটিল রোগীদের ট্রিটমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্থানি হোমিও গবেষকদের উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক হোমিও কম্বাইন রুলস ফলো করি । তাই অনলাইনে প্রেসক্রিপসন না করে আমরা সরাসরি ট্রিটমেন্ট দেই । আর বিগত ২০০৭ সাল থেকে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের হাজার হাজার রোগীদের প্রপার ট্রিটমেন্ট দিয়ে সুস্থ করেছি । আমাদেরকে অভিজ্ঞতাও আল্লাহ পাক কম দেন নি । তাই আপনাদের জটিল রোগসমূহ নিয়ে আমাদের কাছে আসলে এই নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি যে আপনারা অন্তত সুচিকিৎসাটা পাবেন । কিন্তু আমরা আপনাকে ১০০% Guarantee দিতে পারব না এ জন্য যে, আমাদের কোনো ঐশ্বরিক ক্ষমতা নেই । তবে কারো রোগ সারিয়ে তাকে পুরিপূর্ণ সুস্থ করতে আমরা আমাদের সর্বজ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে আপ্প্রান চেষ্টা করে থাকি । আমরা ডাক্তার । আমরা খুব ভালো করি জানি, একজন ব্যক্তি তার জীবনের শেষ আশাটুকু নিয়ে বাচার জন্য অত্যন্ত বিপদে পড়ে সুস্থতা লাভের জন্য একজন ডাক্তারের নিকট আসেন । আর একজন ব্যক্তি তার একটা সমস্যা নিয়ে বার বার আমাদের কাছে আসুক এটা আমাদের নীতি বিরুদ্ধ, এবং এটা আমাদের জন্য লজ্জাকরও বটে ।
দেশে হোমিও চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচের বিষয় :-
আগেই বলেছি হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা সম্পর্কে কয়েকজন ভাইয়ের কমেন্টস দেখেই আজকের নোটটি লিখতে বসেছি । এও বলছি আমাদের দেশের অনেকেই হোমিও ডাক্তারদের ডাক্তার মনে করেন না । যদিও এটা তাদের দোষ নয় । এটা পুঁজিবাদী লবীর অপপ্রচারের ফসল । যাই হোক আমাদের দেশে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা সংক্রান্ত খরচ সম্পর্কে মাত্র একটা উদাহরণ দিয়ে কিছুটা ধারণা দিব এখন –
আমাদের দেশে এমন হোমিও ডাক্তারও রয়েছেন তারা জটিল ব্যাধিসমূহের যেমন- পুরুষত্বহীনতা, লিভার ক্যান্সার, জরায়ুর ক্যান্সার ইত্যাদির ট্রিটমেন্ট করতে গিয়ে ১ মাসের চিকিৎসা ব্যয় বিশ হাজার ( ২০’০০০ ) টাকা করে নিয়ে থাকেন । কিন্তু আধুনিক হোমিওপ্যাথিতে ট্রিটমেন্ট নিতে আসলে এই সকল জটিল রোগের ট্রিটমেন্ট এর ক্ষেত্রে ২-৪ মাস সময় কালের চিকিত্সায় প্রতি মাসে ১৮০০ থেকে ৪০০০ টাকা ( রোগের তীব্রতা এবং ঔষধের মুল্য অনুসারে ) খরচ হয়ে থাকে । আবার সাধারণ রোগ ব্যাধির ক্ষেত্রে ৫০-১০০ টাকার ট্রিটমেন্টও আমরা দিয়ে থাকি সেটা আমাদের শুভাকাঙ্খীরা বেশ ভালো করেই জানেন ।
কিন্তু আমাদের সেবা যদি আপনাদের ভাল না লাগে, ভাই তাহলে আপনাদের পছন্দনীয় ডাক্তারদের কাছে যাবেন, আর সেই স্বাধীনতাও রয়েছে আপনাদের । কিন্তু হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা সম্পর্কে না জেনে না বুঝে অনর্থক আজে বাজে মন্তব্য করাটা আদৌ কি উচিত ? আজ অন্য একটি স্টেটাসে কয়েকজন ভাইয়ের কমেন্টস দেখে এই NOTE টি লিখতে বাধ্য হয়েছি । তারা হয়তো হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা রাখেন না অথবা হোমিওপ্যাথি চিকিত্সার ঘোর বিরোধী । কিন্তু বিষয় যাই হোক – যারা হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে জানেন তারা সর্বদাই হোমিও ট্রিটমেন্টই নিবেন এবং অন্য কোথাও যাবেন না, সেটাও আমরা ভালো করে জানি ।
দেশে একটা সমন্মিত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন :-
আর আমরা এটাও বলছি না হোমিওপ্যাথিই একমাত্র চিকিত্সা । আমরা খুব ভালো করেই জানি প্রতিটা চিকিত্সা পদ্ধতিরই কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে । এটা অ্যালোপ্যাথির ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য তেমনি হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । কিন্তু জটিল রোগসমূহ রুট লেভেল থেকে নির্মূল করে রোগীকে পরিপূর্ণ আরোগ্য করার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে ভালো এবং সর্বাধিক কার্যকর ট্রিটমেন্ট রয়েছে যা অ্যালোপ্যাথিতে ততটা কার্যকর হয় না অন্যদিকে একজন মৃত্যু পথযাত্রী রোগীকে তাত্ক্ষণিক ট্রিটমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথির কোনো বিকল্প দেখি না । আবার দুর্ঘটনায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির অঙ্গবিকৃতি ঘটলে সে ক্ষেত্রে সার্জারীর দরকার হয়ে পড়ে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক চিকিত্সারও প্রয়োজন রয়েছে ।
আমাদের সম্পর্কে যে যাই বলুক একটা কথা আমরা সরাসরি বলি – আমরা গোড়া ডাক্তার নই, আমরা এ যুগের আধুনিক হোমিও ডাক্তার । আমরা প্রতিটি চিকিত্সা পদ্ধতির গুরুত্বই বুঝি । যদি সবগুলি চিকিত্সা পদ্ধতির সমন্ময়ে একটা কম্বাইন ট্রিটমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলা যেত আমাদের বিশ্বাস, তাহলে মানুষ অন্তত যথাযথ চিকিত্সা সেবাটুকু পেত আর অযথাই জটিলরোগ সমূহ চিকিৎসায় দরিদ্র লোকদের ঘর বাড়ি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা খরচ করার প্রয়োজন পড়ত না । কিন্তু আমাদের পুঁজিবাদী লবী কখনই এ দেশে এটা হতে দিবে না ।
*** সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন সবাই, মহান আল্লাহর কাছে এই আমাদের কামনা । ***
শুভেচ্ছা,