প্রতিটি হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারকে অর্গানন অব মেডিসিনের নিয়ম নীতি ,মেটেরিয়া মেডিকার শক্তিকৃত ঔষধ প্রয়োগ করতে হয়।অর্গানন অব মেডিসিন,মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা ও ক্রোনিক ডিজিজ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের আদর্শ পথ প্রদর্শক।১৮শতকের শুরু হতে কোন পরিবর্তন ছাড়াই মহাত্মা হ্যানিম্যানকে গুরু মেনে চিকিৎসাই হোমিওপ্যাথি।কোন মন গড়া মতে হোমিওপ্যাথি চলতে পারে না।একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারকে নিম্নলিখিত নিয়ম মেনেই ডাক্তারী পেশা পরিচালনা করা কর্তব্য।
হোমিওপ্যাথ কে ?
যাহা কিছু চক চক করে তাহাই যেমন সোনা নহে, তেমনই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রোগীতে প্রয়োগ করিলেই হোমিওপ্যাথ হওয়া যায় না। যে কোন চিকিৎসকের একান্ত প্রয়োজনীয় সাধারণ গুণাবলী ছাড়াও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে কতকগুলি বিশেষ গুণের অধিকারী হইতে হইবে। তবেই তিনি হোমিওপ্যাথ নাম ধারণ করিবার যোগ্যতা অর্জন করিবেন বলিয়া আমার বিশ্বাস। অন্যথায় হোমিওপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথ সম্মন্ধে সাধারণের ভ্রান্ত ধারণার অবসান হইবে না। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা-শাস্ত্র সম্পূর্ণ আয়ত্ত করা খুবই দুরূহ বলিয়া আমি মনে করি। তথাপি সত্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, অদম্য অধ্যবসায়, নিরলস প্রচেষ্টা এবং দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের দ্বারা এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করা সম্ভব। অন্যের সমালোচনা নহে, আজ আমাদের আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্ম-সমালোচনার সময় আসিয়াছে – আমরা কে কতটুকু নিম্নোক্ত গুণাবলীর অধিকারী ?
(১) জীবিত মানুষের মধ্যে জীবনীশক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাসী হইতে হইবে। সুস্থতা, রোগগ্রস্থতা এবং আরোগ্য জীবনীশক্তিরই রূপান্তর মাত্র এই উপলদ্ধিই হইল হোমিওপ্যাতিক শাস্ত্রের প্রথম সোপান। দুর্ভাগ্যবশতঃ জীবনীশক্তিতে বিশ্বাসী নহেন, এমন হোমিওপ্যাথের সংখ্যা নগণ্য নহে। তাই আমরা রক্তে ও প্রস্রাবে শর্করা কমাইতে সাইজিজিয়াম, রক্তের চাপ কমাইতে রাউলফিয়া, যকৃতে শক্তিবৃদ্ধিতে চেলিডোনিয়াম, কারডুয়াস প্রভৃতির মাদার টিনচারস্ হামেশাই ব্যবহার করিয়া আসিতেছি। সমগ্র মানুষকে বাদ দিয়া দেহ যন্ত্রের এবং জীবনীশক্তি বাদ দিয়া শুধুই মানুষটির চিকিৎসা চলিতেছে।
(২) ভেষজের এবং জীবাণুর সূক্ষ্ণ শক্তিতে বিশ্বাসী হইতে হইবে। জীবনী শক্তিতে বিশ্বাসী না হইলেও ঔষধের ও জীবাণুর সূক্ষ্ণ শক্তিতে বিশ্বাসী হওয়া সম্ভব নহে। তাই, আমরা সুনির্বাচিত ঔষধ নিম্নশক্তিতে এবং অধিক পরিমানে ব্যবহার করি তাহার বস্তুগত প্রতিক্রিয়া (Physiological action)-র আশায়। ফলে, শুধু, রোগীর কষ্টের সাময়িক উপশম দেওয়া ছাড়া, সারা জীবনে বহু হোমিওপ্যাথ একটিও চির-রোগের স্থায়ী নিরাময়ে সক্ষম হন না। ঔষধের গুণগত শক্তি (Dynamic action) যে অসীম ক্রিয়ার অধিকারী, তাহা যদি আমরা সম্যক উপলদ্ধি করিতে পারি, তবে কখনোই নিম্নশক্তিতে নিজেদেরকে আর আবদ্ধ রাখিতে প্রয়াস পাইব না । জীবাণুর সূক্ষ্ণ-শক্তিতেত বিশ্বাস নাই বলিয়াই আমাদের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়—হোমিওপ্যথিক ঔষধ জীবাণু ধ্বংস করিতে পারে কি ? তাই, বিকোলাই, ম্যালেরিয়া, টিটেনাস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগের নাম শুনিলে আমরা ভয় পাই এবং অন্য চিকিৎসাশাস্ত্রের শরণাপন্ন হইবার পরামর্শ দেই।
(৩) সত্যের প্রতি অনুরাগী হইতে হইবে এবং পরীক্ষালদ্ধ সত্য ঘটনাকেই একমাত্র হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করিতে হইবে। কোন প্রকার ভিত্তিহীন মতবাদ, যুক্তিহীন অভিজ্ঞতা বা নীতিহীন আশ্রয় গ্রহণ করো চলিবে না।
মহাত্মা হ্যানিম্যান গতানুগতিকতার স্রোতে নিজেকে ভাসাইয়া দেন নাই। পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার দ্বারা যাহা অসত্য বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে, তাহাই ত্যাগ করিয়াছেন এবং একমাত্র পরীক্ষালদ্ধ সত্যকেই আঁকড়াইয়া ধরিয়াছেন। আজ আমরা তাঁহার আবিস্কৃত বৈজ্ঞানিক তথ্য ও সত্যকে শুধুমাত্র পুরাতন মতবাদের দোহাই দিয় আধুনিকতার খোলস পরাইতে চাহিতেছি। মাধ্যাকর্ষণ প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক সত্য কি পুরাতন বলিয়া ত্যাগ করিতে হইবে? হ্যানিম্যান পৌনে দুইশত বৎসর পূর্বে যাহা বলিয়াছেন, বর্তমান যুগে তাহার পরিবর্তন প্রয়োজন, এই মতবাদের ধারক ও বাহকগণ উগ্র আধুনিকতার নামে হোমিওপ্যাথিতে পেটেন্ট, টনিক, একযোগে একাধিক ঔষধের প্রয়োগ, হোমিও-স্পেসিফিক প্রভৃতি অ-হোমিওপ্যাথিক পন্থার আশ্রয় গ্রহণ করিতেছেন এবং করিতে শিখাইতেছেন। পরিবর্তনেরর জন্যই পরিবর্তন, অভিজ্ঞতার নামে যথেচ্ছাচার প্রকৃত হোমিওপ্যাথ সৃষ্টির পথে আজ প্রধান অন্তরায় হইয়া দাঁড়াইয়াছে।
(৪) হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের প্রত্যেকটি ইন্দ্রিয় খুব প্রখর শক্তি-সম্পন্ন হওয়া একান্ত দরকার। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, ঘ্রাণশক্তি, ইত্যাদির কোনটি কম শক্তি সম্পন্ন হইল সঠিক রোগী-চিত্র পাইতে অনেক সময় ষথেষ্ট অসুবিধা হয়।
(৫) পর্যবেক্ষণ করিবার উপযুক্ত মানসিকতা এবং একাগ্রতা থাকা চাই। রোগী-লিপি প্রস্তুত করিতে, ঔষধ ও রোগীচিত্র হৃদয়ঙ্গম করিতে এবং সর্বোপরি ঔষধ প্রয়োগের পর তাহার প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করিতে পর্যবেক্ষণ-ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা প্রকৃত হোমিওপ্যাথ মাত্রই স্বীকার করিবেন। এই পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার অভাবই হোমিওপ্যাথিতে অসাফল্যের প্রধান কারণ বলিয়া মনে করি।
(৬) কোন প্রকার ভ্রান্ত, বদ্ধমূল ধারণার বশবর্তী হইলে চলিবে না। সত্যের নিকট আনুগত্য স্বীকার করিলে তবেই সর্বপ্রকার গোঁড়ামী ও ভ্রান্ত ধারণার অবসান সম্ভব। ভিত্তিহীন অভিজ্ঞতা হইতে গৃহীত ধারণা, পূর্বসূরীদের ভ্রান্ত ধারণার অন্ধ অনুকরণ এবং সহজে বাজিমাৎ করিবার কৌশল একবার বদ্ধমূল হইলে তাহা দূর করা অত্যন্ত দূরূহ। নিজে যাহা জানি বা বুঝি, তাহাই ঠিক; অন্যেরা কেহ কিছুই জানেন না বা বোঝেন না –এই বদ্ধমূল ধারণা হইতেই হোমিওপ্যাথিতে দলাদলির সৃষ্টি এবং রোগী ও ঔষধ সম্পর্কেও এই ধরনের বদ্ধমূল ধারণাই বহু অসাফল্যের কারণ।
(৭) বিশ্বস্ততার সহিত হ্যানিম্যানের নির্দেশিত পন্থায় রোগী-লিপি প্রস্তুত করিবার কৌশল আয়ত্ত করিতে হইবে। চিররোগে রোগী-লিপি ছাড়া চিকিৎসা করা অসম্ভব বলিয়াই আমার মনে হয়। রোগী-লিপি ছাড়া ঔষধের ক্রিয়া নির্ণয় করা বা দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র দেওয়া কোন প্রকৃত হোমিওপ্যাথের পক্ষে সম্ভব নহে।
(৮) হোমিওপ্যাথিক রীতি অনুসারে রোগের উত্তেজক, ধারক ও বাহক কারণগুলি সম্যক উপলদ্ধি করিতে হইবে। জীবাণু রোগ সৃষ্টি করে –এ সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ নাই। কিন্তু রোগসৃষ্টিতে জীবাণুর স্থান অনেক পরে। জীবাণুর পূর্বে এবং পরে আরও অনেক কারণ আছে, সেগুলি জানিলে তবেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সম্ভব।
(৯) রোগ-আরোগ্যের পথের বাধাগুলি সম্যক্ অবগত হইয়া তাহা দূরীকরণের জ্ঞান অর্জন করিতে হইবে। রোগী নিয়মিত মদ্যপান করে এবং রাত্রি জাগরণ করে। এসব ক্ষেত্রে নাক্সভমিকা যতই খাওয়ানো যাক না কেন, অভ্যাস পরিবর্তন না করাইলে আরোগ্য করা সম্ভব নহে। এইরূপ অনেক বাধা আছে। সেগুলি না জানিয়া শুধু ঔষধ নির্বাচন করিলেই প্রকৃত হোমিওপ্যাথের কর্তব্য শেষ হইবে না।
(১০) রোগ ও রোগীর পক্ষে ক্ষতিকর খাদ্য, পানীয়, অন্যান্য দ্রব্য, অভ্যাস ও পরিবেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন থাকিয়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে।
(১১) হোমিওপ্যাথির মূল নীতিগুলির উপর শ্রদ্ধাশীল হইতে হইবে এবং কোন কারণেই নীতি-বিগর্হিত পথে না চলিবার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করিতে হইবে। শুধু অতি দ্রুত কি উপায়ে ধনী হওয়া যায়, এই মানসিকতায়, চিন্তাভাবনাহীন ঔষধ নির্বাচনই অহোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রধান কারণ। গোঁড়ামীর আশ্রয় গ্রহণ না করিয়াও নিজের উপর আস্থা এবং হোমিওপ্যাথি-শাস্ত্রের উপর দৃঢ় বিশ্বাসের দ্বারা পূর্বোক্ত উদ্দেশ্য সাধন করা যায়—হয়ত বা একটু দেরীতে।
(১২) লক্ষণের মূল্যায়ণ ও তদ্বারা ঔষধ ও রোগীচিত্র সম্যক্ অবগত হওয়ার কঠিন প্রচেষ্টায় ব্রতী হইতে হইবে। লক্ষণের মূল্যায়ণ করিতে যিনি সক্ষম, হোমিওপ্যাথিতে সাফল্য তাঁহার করতলগত। খ্যাত, অখ্যাত যে চিকিৎসকের মধ্যেই এই বিশেষ গুণটি বিদ্যমান, তিনি আমার নমস্য।
(১৩) চিররোগে হ্যানিম্যানের দীর্ঘ ১২ বৎসরের নিরলস অনুসন্ধানের ফসল মায়াজম্ । এই মায়াজম্ তত্ত্বে বিশ্বাসী হইতে হইবে এবং মায়াজম্ বিরোধী ঔষধ প্রয়োগে চিররোগের মূলোচ্ছেদ করিবার কঠিন ব্রত গ্রহণ করিতে হইবে। অন্যথায় সারাজীবন শুধু রোগের সাময়িক উপশম দিয়াই সন্তুষ্ট থাকিতে হইবে। চির-রোগগ্রস্থ রোগীকে সম্পূর্ণ নিরাময় করিয়া যে শান্তি লাভ করা যায়, তাহা চিরকাল অজ্ঞাতই থাকিয়াই যাইবে।
(১৪) উচ্চশক্তিযুক্ত হোমিওপ্যাথিক ঔষধের অপব্যবহারের ফলে রোগীর যে অপরিমেয় ক্ষতি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হইতে পারে—ইহা সম্যক্ অবগত হইয়া, উচ্চশক্তিযুক্ত ঔষধ মুড়ি-মুড়কির ন্যায় প্রয়োগ করা হইতে বিরত হইতে হইবে। অন্যথায় অন্য কাহারো নিকট না হোক, নিজের বিবেকের নিকট অবশ্যই জবাবদিহি করিতে হইবে।
(১৫) সুনির্বাচিত উচ্চশক্তিযুক্ত এক মাত্রা ঔষধ প্রয়োগের ফলে কত রকমের পরিবর্তন সংঘটিত হইতে পারে, সেই সকল পরিবর্তনের তাৎপর্য কি এবং তাহার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে কি করণীয়, তাহা অনুধাবন করিবার মতে পর্যবেক্ষণ-ক্ষমতার অধিকারী হইতে হইবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম ব্যবস্থাপত্র মোটামোটি সুনির্বাচিত হয়। কিন্তু ঔষধ প্রয়োগের পর যে পরিবর্তন আসে আমরা তাহার তাৎপর্য অনুধাবন না করিয়াই দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র দেই। ইহাই হোমিওপ্যথিতে অসাফল্যের সর্বাপেক্ষা প্রধান কারণ বলিয়া আমার বিশ্বাস।
(১৬) দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র কি, কেন, কোথায়, কখন এবং কিভাবে নির্ণয় করিতে হইবে, সে সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞানলাভের চেষ্টা করিতে হইবে। একটি ঔষধ প্রয়োগের নীতিতে বিশ্বাসী হইতে হইবে। একত্রে যাঁহারা একাধিক ঔষধের ব্যবস্থাপত্র দেন, তাঁহারা কি করিয়া দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্ণয় করেন, তাহা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের বাহিরে।
(১৭) কোন কোন ক্ষেত্রে সাময়িক উপশম-প্রদানকারী ঔষধের প্রয়োগ বিধেয় এবং অপরিহার্য্য। সেই সব ক্ষেত্রে উচ্চশক্তিযুক্ত আরোগ্যকারী ঔষধ প্রয়োগ করিলে রোগীর ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশী। হোমিওপ্যাথি মৃত লোক বাঁচাইতে পারে না। যে সব রোগীর আরোগ্যলাভ সম্ভব, সেই সব রোগীই আরোগ্যলাভ করে—একথা হ্যানিম্যান, ডাঃ কেন্ট প্রভৃতি সকলেই বলিয়াছেন। যে রোগীর জীবনীশক্তি এমন স্তরে নামিয়া গিয়াছে যে, ঔষধের ক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া করিবার শক্তি নাই – সেই সব রোগীকে আরোগ্যকারী ঔষধ উচ্চশক্তিতে প্রয়োগ করিলে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ দেহযন্ত্রের বিপর্যয় অনিবার্য হইয়া উঠে এবং রোগী দ্রুত মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হইতে থাকে। এই সকল ক্ষেত্রে নিম্নশক্তির সাধারণ-ক্রিয়াশক্তিসম্পন্ন ঔষধ প্রয়োগ করিয়া রোগীকে যতটা সম্ভব উপশম দেওয়ার চেষ্টা করাই প্রকৃত চিকিৎসকের একমাত্র কর্তব্য।
(১৮) ঔষধের ক্রিয়াকাল জানিতে হইবে এবং তদনুসারে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ফল নির্ধারণ করিতে হইবে। গভীর-ক্রিয়াশক্তিসম্পন্ন কোন ঔষধ প্রয়োগ করিয়া সাত বা দশদিন পরে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র স্থির করিবার চেষ্টা করিলেই ব্যর্থতা আসিবে।
(১৯) সর্বপ্রকার গোঁড়ামী ত্যাগ করিতে হইবে এবং ভুল ঔষধ নির্বাচন করিয়া অহেতুক দীর্ঘদিন অপেক্ষা করিবার প্রবণতা বর্জন করিতে হইবে। যেহেতু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করিয়া ক্রিয়ার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করিতে হয়, তাই ভুল ঔষধ প্রয়োগ করিয়াও মাসের পর মাস অপেক্ষা করা এবং রোগীকে অনিবার্যভাবে মৃত্যুর দিকে আগাইয়া দেওয়া চিকিৎসকের কর্তব্য নহে।
(২০) ঔষধ-চিত্র, ঔষধের ক্রিয়াকাল এবং ঔষধের প্রয়োগজনিত পরিবর্তনগুলি সম্যক্ উপলদ্ধি করিবার জন্য হ্যানিম্যানের মেটিরিয়া মেডিকা পিউরা, অ্যালেনের এনসাইক্লোপিডিয়া প্রভৃতি পুস্তক পাঠ করিয়া ঔষধের প্রুভিং সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করিতে হইবে।
প্রকৃত হোমিওপ্যাথ হইতে হইলে উল্লিখিত বিষয়গুলি সম্বন্ধে যথাসাধ্য জ্ঞান অর্জন করিতে হইবে। এই জ্ঞানের উপর ভিত্তি করিয়া যে হোমিওপ্যাথি গড়িয়া উঠিবে, সেই হোমিওপ্যাথিই হইবে ভারতবর্ষের কোটি কোটি রোগযন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষের আশার আলো, চিকিৎসকের পরম লক্ষ্য এবং চিকিৎসা-শাস্ত্রের বিস্ময়।
মূল লেখকঃ শ্রদ্ধেয় ডাঃ এস. পি. দে মহোদয়।কপি- ডা. এ. কে. এম. রুহুল আমিন স্যারের ফেসবুক ওয়াল হতে।