লক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়সমূহের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিঃ
*******************************************
************************
সাধারণ অর্থে বলা যায় শরীরগত ও মনন ক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতার প্রতিক্রিয়া হল লক্ষণ। লক্ষণসমূহ আলোকপাতের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গিগত বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য উল্লেখ করা এ জন্য প্রয়োজন যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত অধিবিদ্যামূলক দৃষ্টিভঙ্গি চলমান এবং ক্রিয়াশীল। এখানে দু’টি দৃষ্টিভঙ্গি তুলনামূলক আলোচনার আলোক নির্ণয় করা যেতে পারে কোন দৃষ্টিভঙ্গি বিজ্ঞানসম্মত এবং কোন দৃষ্টিভঙ্গি অনুমানলব্ধ। লক্ষণসমূহের উপাত্ত সংগ্রহের ভিত্তি হিসেবে যে সব বিষয়সমূহ সংশ্লিষ্ট তৎসংক্রান্ত আলোচনা জরুরী।
এ-সংক্রান্ত বিষয়সমূহ হলঃ
(১) মানবদেহের গাঠনিক প্রকৃতি।
(২) জীবনীশক্তি।
(৩) রোগ ও রোগশক্তি।
(১) মানবদেহের গাঠনিক প্রকৃতি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিঃ
**********************************************
√বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির মতে বিশ্ব ব্রম্মান্ডের মত মানবদেহের গঠনিক উপাদানসমূহ হল পরমানুসমূহ। যা রাসায়নিক বন্ধন রূপে থাকে। ৭০ কিলোগ্রাম ওজনের মানদেহ ৭ট্রিলিয়ন কোষ দ্বারা নির্মিত। যা পরমানু দ্বারা গঠিত। এর বৈশিষ্ট্য হল অজড়।
√অধিবিদ্যামূক (Metaphysical) দৃষ্টিভঙ্গির মতে মানবদেহের গাঠনিক প্রকৃতি জড়। যত সময় এর মধ্যে কোন অজড় শক্তির আগমন না হবে,ততখন এর বৈশিষ্ট্য হল জড়।
(২) মানবদেহের শক্তি বা জীবনী শক্তি প্রসঙ্গেঃ
√মানবদেহের শক্তি বা জীবনী শক্তি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি হল-মানবদেহের কোষস্তরে পরমানুসমূহের (রাসায়নিক বন্ধন রূপে থাকে) পারস্পরিক রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট শক্তি হল জীবনী শক্তি। যাকে শক্তি সমৃদ্ধ যৌগ(ATP) বলা হয়। এই যৌগ হল ইলেক্ট্রনের সমাহার। সুতরাং মানবদেহের শক্তি হল জৈব বৈদ্যুতিক শক্তি। অটোট্রফিক জীব হিসেবে মানবদেহের গঠন ও শক্তি সৃষ্টির উৎস হল উদ্ভিজজাত শ্রেণি। শরীরবৃত্তীয়ে শক্তি সৃষ্টি ও বিকাশের প্রক্রিয়ার ভিত্তি হল প্রাণরাসায়ন বিজ্ঞান। শক্তির গতি,পরিবর্তন ও রূপান্তরকরনের ভিত্তি হল পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিত শাস্ত্র। এই জীবনীশক্তি শক্তি উপলব্ধি ও অনুভব করা যায় এবং ব্যাখ্যা করা যায়।
√জীবনীশক্তি সংক্রান্ত অধিবিদ্যামূলক দৃষ্টিভঙ্গি হলঃ
জড় দেহের মধ্যে আত্মার ন্যায় অজড় অদৃশ্য এক শক্তি বিদ্যমান যা জড় দেহের প্রাণ সন্ঞ্চার করে থাকে।অতীন্দ্রিয় অশরীরী এই জীবনীশক্তি আকার- আয়তনহীন অথচ অস্তিত্ব বিরাজমান,একে প্রাণ ক্রিয়া অভিহিত করা হয়েছে। যাকে জীবনীশক্তি বলা হয়েছে। এই শক্তির সৃষ্টি ও বিকাশ প্রাণরাসায়ন বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয় নি,এমন কি এই শক্তির গতি, পরিবর্তন ও রূপান্তর প্রক্রিয়া বলতে কিছুই নাই। এই শক্তি উপলব্ধি ও অনুভব করা যায়,কিন্তু ব্যখ্যা করা যায় না।
# রোগশক্তি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিঃ
√রোগশক্তি সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি হল
শরীরবৃত্তীয় রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানসমূহ ও বহিরাগত ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদানসমূহ,ক্ষতিকারক জীবাণু ও নেতিবাচক মানসিক চাপ শরীর অভ্যন্তরে শরীরবৃত্তীয় কার্য প্রক্রিয়ায় বিপর্যয় সৃষ্টির ফলে কোষ,কলা,অংগ ও তন্ত্রের যে পরিবর্তন ঘটে,সেই পরিবর্তন শরীরগত ও মনন ক্রিয়ায় যে অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়,তাই হল রোগ আর যে সব কারনসমূহ এই বিপর্যয় সৃষ্টি করে সেই কারনসমূহ হল রোগশক্তি। এই কারনসমূহ শরীরবৃত্তে যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদানসমূহ সৃষ্টি করে তাকে Free Redical Substance বলে
# Free Redical Substanceএর অনুসমূহ হলঃ
★নাম/সংকেত/পারমানবিক ওজন।
√ Superoxide Ion Radical/O2-/Molar Mass-31.999 g°mol-1
√ Hydrogen Peroxide-/H2O2/Molar Mass34.0147 g/mol
√ Hypochlorite/ClO/Molar Mass 51.452 g/mol
√Nitric Oxide/NO//Molar Mass30.01 g/mol
√Peroxynitrite/NO3-//Molar Mass62.005 g/mol
√Hydroxyl Radical/HO//Molar Mass 17.007 g°mol-1
√Singlet Oxygen/O2//Molar Mass 31.998 g°mol-1
√Hyrogen Superoxide/Peroxyl Radical/HO2/Molar Mass33.006 g°mol-1
√Ozone/O3//Molar Mass47.997g°mol-1
√Hypoclorus Acid/HOCL//Molar Mass52.0147 g/mol
Free Radical Substance-Substance-এর অনুসমূহের ইলেকট্রনসমূহ হল অস্থিতিশীল ওবিজোড়।এরা ইলেকট্রনের কক্ষ পথের বাহিরে অবস্থান করে থাকে। Free Redical Substance-এর অনুসমূহের কাজ হল শিকল বিক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের কোষ, কলা, ডি,এন,এসহ পুষ্টি উপাদানসমূহ ক্ষতি সাধন করে দূরারোগ্য ও মরণ ব্যধি সৃষ্টি করে থাকে।
√রোগশক্তি সংক্রান্ত অধিবিদ্যামূক দৃষ্টিভঙ্গিঃ
রোগশক্তি হচ্ছে অজড় অদৃশ্য এক অশুভ শক্তি। অতীন্দ্রিয় অশরীরী এই রোগ শক্তিআকার ও আয়তনহীন অথচ অস্তিত্ব বিরাজমান,একে প্রাণ ক্রিয়ার বিপর্যয়কারী শক্তি অভিহিত করা হয়েছে। এই অজড় অশুভ অদৃশ্য শক্তি অজড় অদৃশ্য নামক জীবনী শক্তিকে বিপর্যস্ত করলে, অসুস্থ্য জীবনী শক্তির প্রতিক্রিয়া শরীরগত ও মনন ক্রিয়ায় বহিঃপ্রকাশের নাম লক্ষণ। অশুভ রোগ শক্তি উপলব্ধি ও অনুভব করা যায়,কিন্তু ব্যখ্যা করা যায় না।
#রোগ শক্তির উৎস সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিঃ
√বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে রোগ শক্তির উৎস স্থল হল আর্থ-সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। এর থেকে উদ্ভুত নেতিবাচক চাপ বা পীড়ন হল রোগের প্রধান কারন।
√অধিবিদ্যামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে রোগ শক্তির কোন উৎস স্থল নেই। শুধুমাত্র অজড় ও অদৃশ্য এক অশুভ শক্তি।
#লক্ষণ সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির পর্যালোচনাঃ
(১) জড়দেহ।
(২) জীবনী শক্তি।
জড়দেহ ও জীবনীশক্তি প্রসঙ্গে দু’টি দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় জীবনী শক্তির বিষয়টি অধিবিদ্যামূলক(Metaphysical) দর্শনের আলোকে ব্যাখা করা হয়েছে। যা অনুমানলব্ধ দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া অন্য কিছুই নয়। ষোড়শ শতাব্দী থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গির যাত্রা শুরু হয়। অধিকাংশ প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রাগ ঐতিহাসিক কালের চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটিয়েছেন। স্নায়ু চিকিৎসা বিজ্ঞানী ফ্রয়েড ১৮শতক থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শক্তভাবে অধিবিদ্যামূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে বিজ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করে মনন ক্রিয়ার ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ শুরু করেন। এক পর্যায় তিনি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বিজ্ঞান বলে মনে করেন নি। তিনি এই বিষয়কে সাইকো এ্যানালিটিক্যাল তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।যা অনুমানলব্দ একটি দৃষ্টিভঙ্গি।সুতরাং যে সব চিকিৎসা পদ্ধতিতে অধিবিদ্যামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান,সেই পদ্ধতি বিজ্ঞান হিসবে গ্রহণ করা বাঞ্চণীয় নয়।সুতরাং এই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে উদ্ভাবিত কোন চিকিৎসা পদ্ধতি সময়ের সাথে বিকাশমান নহে।
#লক্ষণের ক্ষেত্রে আবেগ-অনুভূতি ইচ্ছা-অনিচ্ছা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ওষুধ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা হিসেবে পালন করে কি?
অধিবিদ্যামুলক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে যে সব চিকিৎসা পদ্ধতিতে জীবনীশক্তি ও মন এক অভিন্ন হিসেবে গন্য করে। অর্থাৎ মননক্রিয়াকে (আবেগ-অনুভূতি ইচ্ছা ও অনিচ্ছা) চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওষুধ নির্বাচনে গুরুত্ব
আরোপ করে থাকে। মননক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া বাহিরর বা অভ্যন্তরীন কোন শর্ত বা কারণের উপর নির্ভর করে না।আক্রান্ত জীবনীশক্তি আবেগ-অনুভূতি ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশের প্রক্রিয়াকে প্রধান লক্ষন হিসেবে গন্য করে চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওষুধ নির্বাচনে গুরুত্ব আরোপ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি কতটুকু বিজ্ঞান সম্মত তা জানার জন্য দুই জন স্নায়ু বিজ্ঞানীর মনস্তত্ত্ব সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হল।
দর্শনগত ইতিহাস জানা থাকলে আপনি নিজেই বলতে পারবেন আপনি কোন দর্শনের উপর দাড়িয়ে কথা বলছেন। আমি আপনাকে/আপনাদের সেই সময়ের কথা বলছি যখন মন ও মানসিকতা বিষয় ছিল প্রধানতঃদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে প্রধানতঃ ভাবাদর্শবাদ ও জড়বাদের বিকাশ ও দ্বন্ধের সূত্রপাত। ভাবাদর্শ অনুসারীরা মনসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পৃথক পৃথক পদ্ধতির অনুসারী দল ও উপদলে বহুধা শাখায় বিভক্ত হলেও এরা সবাই প্রবৃত্তিবাদী অন্তর্দশী তাই এদেরকে এক গোষ্টিতে ফেলা যায়।১৮দশক পর্যন্ত এদের প্রধান্য পরিলক্ষিত হয়। বিখ্যাত দার্শনিকদের মধ্যে প্লেটোর মনোসংক্রান্ত বিষয় দৃষ্টিভঙ্গি হল ঈশ্বর প্রদত্ত আর অ্যারিস্টলের মতে মনের প্রকৃতি স্বভাবজাত,অন্তর্নিহিত ও জন্মগত। পরে ইলান ভাইটাল, প্রাণশক্তি ও জীবনীশক্তির আমদানি হয়। এই সময় কালে শরীরবিদ্যা সংক্রান্ত ব্যাখ্যা সুসংগঠিত ভাবে গড়ে উঠে নি। ফলে এই সময় কালে যে সব চিকিৎসা বিজ্ঞানে উদ্ভব এবং বিকাশ কাল সেই সব চিকিৎসা বিজ্ঞানে জীবনীশক্তি,মননক্রিয়া ও রোগশক্তির ব্যাখ্যায় প্রবৃত্তিবাদী অন্তর্দশী দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর্ভূক্ত হয়।বিজ্ঞানের বিকাশ কালে শরীরবৃত্ত ও মননক্রিয়ার ব্যাখ্যায় আধুনিকতা রূপে এলেও শরীর,মনও মানসিকতার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে প্রবৃত্তিবাদী অন্তর্দশী দৃষ্টিভঙ্গি এখনও চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপরিবর্তিত।সময় ও প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হওয়াটাই হল বিজ্ঞানের শ্বার্শত নিয়ম।এই নিয়মের বত্যয় ঘটলে তা এক সয়য় সেই চিন্তা বা বিষয়সমূহ হারিয়ে যায় বা অপরিকল্পিতভাবে নুতন বিষয়ের আবির্ভাব ঘটে।১৮৩৯ সাল থেকে ভাবাদর্শের বহুধা দ্বিধাগ্রস্ত মতামত এক সাংগঠনিক রূপ নিতে থাকে। সমসামায়িক কালের দুইজন স্নায়ু বিজ্ঞানীর মনোসংক্রান্ত বিষয় দৃষ্টিভঙ্গি আলোকপাত করা যেতে পারে।দুইজনের একজন হলেন ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯) অন্যজন হলেন পাভলভ(১৮৪৯ -১৯৩৬)।
(ক)ফ্রয়েডের মনস্তত্ত্বের ভিত্তি ছিল সাইকোঅ্যানালিটিক তত্ত্ব। এক পর্যায় স্নায়ু বিজ্ঞানের গবেষণা পরিহার করে অনুমান ভিত্তিক মনস্তত্ত্ব প্রনয়নে সর্ব শক্তি নিয়োগ করেন।পরবর্তীতে তিনি তার সাইকোঅ্যানালিটিক তত্ত্বকে বিজ্ঞান পর্যায়ভূক্ত মনে করেন নি। তিনি তাঁর তত্ত্বকে অধিমনোবিদ্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন। স্নায়ু শরীরবৃত্তের সংগে সম্পর্কহীন প্রকোষ্ঠ ভিত্তিক মনস্তত্ত্ব গড়ে তোলেন। ফ্রয়েডসহ অতীত মনস্তত্ত্ববিদদের মননক্রিয়ার ভিত্তি ছিল নৃ-বিদ্যা বা নৃতত্ত্ব ও পৌরানিক কাহিনী।
(খ)পাভলভের মনস্তত্ত্বের ভিত্তি হল মস্তিস্ক ও স্নায়ুর প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানবের কেন্দ্রীয় স্নায়ুসংস্থা মানবিক ধর্মের অধিকারী হয়েছে। মানবিক কোন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটাতে হলে মানব সমাজ মধ্য থেকে উপযুক্ত শিক্ষার প্রয়োজন।পাভলভের দর্শনগত দৃষ্টিভঙ্গি হল দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি।এই বিশ্বব্রম্মান্ডের সকল কিছুর বিকাশ দ্বন্দ্বমূলক।দ্বন্দ্ব ছাড়া মানব প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য ও মানসিক বিকাশে সঠিক ধারণা গঠন করা সম্ভব নয়-এ হল পাভলভীয় অভিমত। ১৯৪০ সালে পাভলভ নোবেল পুরস্কার পান।
√উল্লেখিত দুইজন স্নায়ু বিজ্ঞানীর মনোস্তত্ত্বের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি হলঃ
(১)ভাববাদ ও দ্বয়বাদাশ্রিত অধিবিদ্যামূলক অভিহিত ফ্রয়েডীয় মনোস্তত্ত্ব। (৩)দ্বান্ধিক বস্তুবাদ সম্ভুত পাভলভের শর্তাধীন পরাবর্ত ভিত্তিক মনোস্তত্ব।
#ফ্রয়েডের মনের প্রকোষ্ঠ সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিঃ মনের প্রকোষ্ঠ সম্পর্কে ফ্রয়েডের দৃষ্টিভঙ্গি হল মনকে মস্তিস্ক আশ্রিত মনে করেন না। কল্পনা অনুসারে মনকে ইদ,ইগো,সুপার ইগো এই তিন প্রকোষ্ঠে বিভক্ত করেন।
√মানসিকতা কার্য-কারণ সম্পৃক্ত নয়,স্থান,কাল নির্ভর নয়।
√বস্তুর জটিলতম বিন্যাস মস্তিস্কের ক্রিয়াকলাপের উপর নির্ভরশীল নয়।
√চৈতন্য মূল্যহীন।
√ইগোকে(অবদমন)সব রকম মননক্রিয়ার জনক হিসেবে গন্য করেন।সহজাত জৈব প্রবৃত্তি নিয়ে মানুষ জন্ম গ্রহন করে।
#পাভলভের মনস্তত্ত্বের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
মন ও মানসিকতার অধঃস্তরের ভিত্তি হল-
√মস্তিস্ক যা স্নায়ুর প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত।তাই পাভলীয় মনোবিদ্যা চৈতন্যতত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত।
√চৈতন্য ইন্দ্রলব্ধ,অনুভূতি, প্রত্যক্ষন ও প্রত্যয় দ্বারা গঠিত।সহজাত জৈব প্রবৃত্তি বলতে কিছু নয়।।চৈতন্য ইন্দ্রীয়লব্ধ তাই বিশেষ অবস্থায় বিশেষ ধরনের মননক্রিয়া ঘটে বলে এর নাম দিলেন শর্তাধীন পরাবর্ত ভিত্তিক মনোবিদ্যা। আর জাতি বৈশিষ্টসূচক স্থায়ী শরীরবৃত্তীয়মূলক প্রতিক্রিয়ার নাম দিলেন শর্তহীন পরাবর্ত। পাভলভের মনক্রিয়া কার্য-কারন সম্পৃত্ত ও স্থান-কাল নির্ভর। বস্তুুর জটিলতম বিন্যাস মস্তিস্কের ক্রিয়া কলাপের উপর নির্ভরশীল।
সমসায়িক কালের দুইজন স্নায়ু বিজ্ঞানীর উল্লেখিত দৃষ্টিভঙ্গিগত তুলনামূলক আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট যে ফ্রয়েডীয় মনোস্তত্ত্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুমানলব্ধ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং যে সব চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান রয়েছে সেই সব চিকিৎসা পদ্ধতি বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত নয়।অন্য দিকে পাভলভের মনোস্তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে প্রতিষ্ঠিত।
#প্রক্ষোভ সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিঃ
***************************
ইতিপূর্বে মনস্ত সংক্রান্ত বিষয় দু’টি দৃষ্টিভঙ্গি তুলনামূলক আলোচনা আলোকপাত করা হয়েছে।প্রক্ষোভ সংক্রান্ত বিষয় কিছু ধারণা আলোকপাতের প্রয়োজন।
√অধিবিদ্যামূলক দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারিদের ধারণা প্রত্যয় অনযায়ী নির্জ্ঞানে প্রকোষ্ঠে অবস্থিত প্রক্ষোভ ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা বোধ শক্তির জনক। প্রক্ষোভ চৈতন্যের নিয়ন্ত্রণক অর্থাৎ সংজ্ঞান নির্জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত ও নির্জ্ঞান নির্ধারিত। প্রক্ষোভ বাস্তবের প্রতিফলন নয়, বাস্তবের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার উপায় বিশেষ -অহংকে রক্ষা করাই প্রক্ষোভের প্রধান ধর্ম। সে জন্য প্রক্ষোভ সর্বজনীন ও যুক্তিহীন। প্রথমত এই সব অনুসারীদের ধারণা প্রক্ষোভ প্রধানত জৈবধর্ম-পশু ও মানুষের রাগের অভিব্যক্তি এক ধরনের। দ্বিতীয়ত্ব চিন্তাশক্তির থেকে অনেক আগে মানুষ প্রক্ষোভ আয়ত্ব করেছে।
√পাভলভের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে- প্রত্যয় অনুসারে প্রক্ষোভ, চেতনার বা বোধশক্তির অংশ বিশেষ। অর্থাৎ চৈতন্যের প্রতিফলন হচ্ছে প্রধান ভিত্তি। প্রক্ষোভের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে ধারণায় প্রতিফলিত বস্তু বা ঘটনা তাৎপর্য নির্ণয় করা ও ব্যক্তির পক্ষে তার মূল্যায়নের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করা। সব ধরণার মধ্যে প্রক্ষোভিক উপাদান কিছু না কিছুই থকবে। ধারণা ছাড়া প্রক্ষোভ তৈরী হয় না,আবার প্রক্ষোভবিহীন ধারণাও থাকতে পারে না।
#দৃষ্টিভঙ্গির পর্য্যালোচনা
★প্রক্ষোভ প্রধানত জৈবধর্ম-পশু ও মানুষের রাগের অভিব্যক্তি এক ধরনের। দ্বিতীয়ত্ব চিন্তাশক্তির থেকে অনেক আগে মানুষ প্রক্ষোভ আয়ত্ব করেছে।
অধিবিদ্যামূলক এই দু’টি ধারণাই ভ্রান্ত।
★বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষের ক্রোধ ও পশুর ক্রোধ প্রতিক্রিয়া এক রকম নয়। মানুষের সব মনন ক্রিয়ার সাথে সামাজিক অভিজ্ঞতার ও অবস্থিতর সম্পর্ক আছে।এখন পর্যন্ত এমন কোন গোষ্ঠীর সন্ধান পাওয়া যায় নি যাদের শুধু আবেগ-অনুভূতি আছে,চিন্তা-ক্ষমতা নেই। সুতরাং প্রক্ষোভ আদিম ও চিন্তাশক্তি অর্বাচীন এর কোন প্রমাণ আজ অবধি পাওয়া যায় নি।সুতারং অধিবিদ্যামূলক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে প্রক্ষোভিক প্রক্রিয়ায় উপর ভিত্তি করে লক্ষণ বা উপাত্ত সংগ্রহ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যহীন।
#লক্ষণ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও উপসংহারঃ
শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে লক্ষণে উৎসের উপর গুরুত্ব আরোপ প্রধান মাপকাঠি হওয়া উচিৎ।এ-সংক্রান্ত বিষয় পূর্বেই আলোকপাত করা হয়েছে।তাসত্ত্বেও বিষয়ের কিছুটা আলোকপাত করা যেতে পারে।প্রথমে উল্লেখ করা যেতে পারে প্রতিক্রয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক ও মননক্রিয়া ভুমিকা।
(১)শরীরিক ক্রিয়া।
(২)মনন ক্রিয়া।
(১) শরীরিক ক্রিয়া দুই প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে।(ক)সহজাত প্রবৃত্তি হল জন্মগত। শরীরবৃত্তমূলক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে জন্মগত স্থায়ী ও সুনির্দিষ্ট (যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে একই) যাকে শর্তহীন পরার্বত বলা হয়। যেমন কঠিন খাদ্য বা ভোজ্যদ্রব্যকে সিক্ত বা নরম করার জন্য লালা নিঃসরণ,সেটা জীবের শারীরবৃত্তিমূলক ধর্ম বা শর্তহীন পরাবর্ত।
(খ)শারীরিক পরিবর্তনশীল ক্রিয়া কারণ রূপে উদ্দীপক শরীরবৃত্তীয় কার্য প্রক্রিয়ায় কোষ,কলা,অংগ ও তন্ত্রসমূহ বিপর্যয়ের স্তর অনুসার শরীরবৃত্তিক প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রূপে পরিলক্ষিত হয়। এই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া শর্তাধীনের উপর নির্ভরশীল। যাকে শর্তাধীন পরার্বত বলা হয়। যেমন কারণ হিসেবে উদ্দীপক ‘বি’ভাইরাস দ্বারা ব্যক্তির যকৃত আক্রান্ত হলে প্রথমে শারীরিক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হবে না। উদ্দীপকের ক্রিয়া তীব্র হলে শরীরবৃত্তিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। অর্থাৎ যকৃত কোষসমূহের বেশীরভাগ অংশ ফাইব্রোসিস রূপান্তরিত হলে দেখা যাবে পা ও উদরদেশে পানি জমে যাওয়া, রক্তশূন্যতা, ক্ষুধা কমে যাওয়া এই সব শরীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া শারীরগতভাবে বহিঃপ্রকাশের নাম শারীরবৃত্তিক প্রতিক্রিয়া যা শারীরিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচ্য।
(২)মনন ক্রিয়া-অস্থায়ী এবং বহু শর্তের উপর নির্ভরশীল। প্রাণী বিশেষের জীবদ্দশায় আয়ত্ত প্রতিক্রিয়া ভঙ্গুর ও ব্যক্তি বৈশিষ্ট্যসূচক। যা পরিবর্তনশীল। যেমন খাদ্যের চেহারা রং দেখার পর বা গন্ধ নাকে এলে তার কারণে যে লালা নিঃসরণ হয় তা মননধর্মমূলক প্রতিক্রিয়া। আবার কারণ হিসেবে উদ্দীপক ‘বি’ভাইরাস কর্তৃক ক্রিয়াশীলতার ভিত্তিতে যকৃতের বিপর্যয়ের স্তর অনুসারে মননধর্মমূলক প্রতিক্রিয়া অভিব্যক্তি আকারে প্রকাশ করে। শারীরিক প্রতিক্রিয়ার মত মননধর্মমূলক প্রতিক্রিয়া অস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল। সুতরাং লক্ষণ পরিবর্তনশীল। যে প্রতিক্রিয়া কারণ হিসেব যে কোন প্রকারের উদ্দীপক প্রথমে স্নায়ু বিশেষকে উত্তেজিত করে স্নায়ুর প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত করে।তারপর কেন্দ্রাভিগামী স্নায়ুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌছায়।সেখান থেকে বহির্মুখী স্নায়ু বেয়ে উত্তেজনা কোন পেশী,গ্রন্থি ও দেহযন্ত্রে সাড়া জাগায়।জন্মগতভাবে শরীরবৃত্তমূলক এই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে স্থায়ী ও সুনির্দিষ্ট। উদ্দীপকের দেহযন্ত্রের কোন অংশে ক্রিয়াশীলতার ভিত্তিতে শারীরবৃত্তিক ও মননক্রিয়ায় প্রতিক্রিয়া অস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল।
#মন ও মানসিকতা প্রসঙ্গে পর্যালোচনা ও উপসংহারঃ
লক্ষণ সংক্রান্ত দুটি দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা ও পর্যালোচনায় যে বিষয়সমূহ আলোকপাত করা হয়েছে তাহল-
√অধিবিদ্যামূলক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরনে চিকিৎসা পদ্ধতির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। কার্য-কারণ সম্পর্কহীন।যা কল্পিত ও অনুমান নির্ভর। মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরবৃত্ত ক্রিয়া-প্রতিক্রয়া অনুসন্ধান করা হয়েছে স্বপ্নের নালী পথে।
√ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি হলঃ
>মন ও মানসিকতার অধঃস্তর হল মস্তিষ্ক।
>মন ও মানসিকতা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর প্রক্রিয়ার সম্পর্কযুক্ত।
> চেতনা-ইন্দ্রলব্ধ অনুভুতি-প্রত্যক্ষণ ও প্রত্যয় দ্বারা গঠিত।সময় ও প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের সাথে চিন্তা ও প্রায়োগিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি হল দ্বন্ধমূলক।
সুতরাং লক্ষণের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া হচ্ছে কোন কারণসমূহ দ্বারা শরীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক কার্য প্রক্রিয়ার বিপর্যয়ের ফলে শারীরিকবৃত্তিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরগতভাবে অস্বাভাবিকতার বহিঃপ্রকাশ ও মনন ক্রিয়ার মাধ্যমে অভিব্যক্তি প্রকাশের নাম হল লক্ষণ।লক্ষণ কার্য ও কারণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যা পরিবর্তনশীল।
সুতরাং লক্ষণ সংগ্রহের ভিত্তি হবে কারণ রূপে উদ্দীপকের ক্রিয়াশীলতার ভিত্তিতে।