মেটেরিয়া মেডিকা ও রেপার্টরি কড়চা
মহাত্মা হ্যানিম্যান তাঁর যুগান্তকারী ও মহৎ উদ্ভাবন হোমিওপ্যাথি কে মানবকল্যাণে উৎসর্গ করার জন্য তৈরি করলেন ‘মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা’। তিনি তার দূরদর্শী দৃষ্টি ও বিচক্ষণতা দিয়ে অনুভব করলেন, শুধু মেটেরিয়া মেডিকা তাঁর স্বপ্ন পূরণ নাও করতে পারে। তাই হোমিওপ্যাথিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও আরো সার্বজনীন করতে নিজেই উদ্যোগী হলেন রেপার্টরি তৈরিতে।( প্রমাণ সংযুক্ত।) হোমিওপ্যাথি যার সৃষ্টি , মেটেরিয়া মেডিকা এবং রেপার্টরিও তারই সৃষ্টি। তবে কেউ কেউ কেন করেন বিরোধীতা ?
রেপার্টরিতে নতুন কী আছে?
Repertory is an index of symptoms of the Homoeopathic Materia Medica, with their corresponding medicines given in gradation and arranged systematically — **(fathermuller.edu.in)
ঔষধ প্রুভিংসের সময় একই লক্ষণ অনেক ঔষধে পাওয়া যায়। রেপার্টরিতে গুরুত্ব অনুসারে তাদের ১,২,৩.. এভাবে গ্রেড নির্ধারণ করা হয় যা মেটেরিয়া মেডিকায় নেই। লক্ষণ সমষ্টির গ্রেড ও মানের যোগফলের সর্বাধিক মান প্রাপ্ত ঔষধটিই সুনির্বাচিত ঔষধ। মান অনুযায়ী কাছাকাছি আর কোন্ ঔষধ আছে, কোন্ গৌণ লক্ষণ বাদ দিলে বা কোন্ মুখ্য লক্ষণ যোগ করলে অন্য কী ঔষধ হতো তাও জানা যায়,ফলে ঔষধ বাছাই সম্পর্কে প্রশ্নের অবকাশ থাকে না।
হ্যানিম্যানের সময় কম্পিউটার ছিলনা। খাতা কলম এর মাধ্যমে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া একটু সময় সাপেক্ষ ছিল ( যদিও বিভিন্ন বই ঘাটার সময়ের চেয়ে কম।)
এখন কম্পিউটারের যুগে বাছাইকৃত লক্ষণে একটি করে ক্লিক এবং রেজাল্টের জন্য বাড়তি একটা ক্লিক ,ব্যাস পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্খিত ফল। শুধু লক্ষণ চয়নে আপনাকে হতে হবে সাবধানী ও নির্ভুল। ওখানেই ডাক্তারের কৃতিত্ব। লক্ষণ বাছাই সঠিক না হলে রেপার্টরি করণ বা মেটেরিয়া মেডিকার জ্ঞান কোন টাতেই সঠিক ঔষধ নির্বাচিত হবে না।( কিছু লোক আবার ধোঁকাবাজির জন্য বলে কম্পিউটার ঔষধ নির্বাচন করে দিচ্ছে, প্রকৃত পক্ষে ঔষধের যথার্থতা শূধুমাত্র লক্ষণ সংগ্রহেই, কম্পিউটার শুধু হিসাবটা নির্ভুল ও দ্রুত করে।)
রেপার্টরিকরণ কী?
কোন এলাকায় একটা চুরি হয়েছে, এলাকার মাতব্বরের কাছে বিচার গেল। তিনি এলাকার সকলের সাক্ষ্য নিলেন। চোরের যা বিবরণ পেলেন তা এরকম-
১। চোর একজন এবং পুরুষ,
২ । বয়স ৩০-৪০ এর মধ্যে,
৩। তার মাথায় টাক,
৪। নাক বোঁচা,
৫। গায়ের রং কালো,,
৬। বেঁটে আকৃতির,
৭ । লিকলিকে হালকা শরীর,
৮ । দাঁড়ি গোঁফ কামানো।
৯ । ডান পা একটু যেন টেনে টেনে দৌড়ায়।
প্রাপ্ত বিবরণে কোন চোরের নাম নেই। কিন্তু মাতব্বর দেখলেন সিঁধেল চোর যদু না হয় মধু। এদর প্রচণ্ড মিল পাওয়া যাচ্ছে সাক্ষীদের কথায় । যদু ,মধু দু’জনেই ঘটনার দিন বাড়ি ছিল না। ডান পা টেনে দৌড়ায় তো মধু। কালু যদিও ডান পা টেনে দৌড়ায় কিন্তু কালু তো ইয়া মোটা – লিকলিকে নয়। সুতরাং নিঃসন্দেহে মধুই চোর। হলোও তাই, দু’ ঘা পড়তেই গড়গড়িয়ে সব স্বীকার করলো মধু। এখন মাতব্বরের মত সুক্ষ্মভাবে কেউ যদি প্রমাণ সংগ্রহ না করতেন হয়তো কেউ শুধু বেঁটে আকৃতির কালো কালু কে, কেউ বা নাক বোঁচা নেলুকেই চোর বলে ধরততন।
এখন একজন হোমিওপ্যাথের দৃষ্টিতে বলুন মাতব্বর মেটেরিয়া মেডিকা না ‘ রেপার্টরি করণ ‘– কোন পদ্ধতিতে চোর ধরলেন। কারণ একজন হোমিওপ্যাথ তো মাতব্বরের মতই রোগীর বিভিন্ন লক্ষণ সংগ্রহ করে একটা ঔষধ নির্বাচন করেন। বেশীরভাগ ই বলবেন মেটেরিযা মেডিকা। কিন্তু সঠিক উত্তর রেপার্টরিকরণ। কারণ প্রতিটি প্রমাণ সংগ্রহ করে তিনি তার মগজে প্রক্রিয়াকরণ করে যদু,মধু, কালু,নেলু সহ অন্য সকলের সাথে তুলনা করে মধুর সাথেই সর্বাধিক সাদৃশ্য পেয়েছেন। যদু,মধু,কালু, নেলু সহ সকল এলাকাবাসী কে তিনি ভালো করে চেনেন ( মেটেরিয়া মেডিকার জ্ঞান) ,আর তুলনা করে শ্রেণিকরণ করে যার সাথে বেশী মিল সেই মধুকে ধরাই হলো রেপার্টরি করণ। মেটেরিয়া মেডিকা হোমিওপ্যাথি কায়া ( শরীর) হলে রেপার্টরি হলো তার মগজ।
সঠিক নির্বাচনে রেপার্টরিকরণ
দোকানে গিয়ে ৪০০ টাকার তেল ২০০ টাকার ডাল কিনে ১০০০ টাকার নোট দিলেন, দোকানদার ক্যালকুলেটর চেপে ৪০০+২০০= ৬০০ -১০০০= -৪০০ অংক করে ৪০০ টাকা ফেরত দিচ্ছে। এটা অনেক সময় Mania’ মনে হলেও সে ভুল পথে নেই। কারণ বড় হিসাব হলে তাকে ঐপথেই হাঁটতে হতো। ছোট খাটো ক্ষেত্রে আমরাও চট্ করে সঠিক ঔষধ বলে দেই। কিন্তু জটিল ক্ষেত্রে? রেপার্টরিকরণই সঠিক পথনির্দেশক হয়। ( ****কীভাবে রেপার্টরি ব্যবহার করতে হয় — বিস্তারিত অন্যত্র জানুন।)
রেপার্টরির বিরোধীতা কেন?
হ্যানিম্যান মেটেরিয়া মেডিকার বিশালতার কথা চিন্তা করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর সহজ ও নির্ভুল উপায় হিসাবে রেপার্টরি তৈরির ব্যবস্থা করেছিলেন। তবে কারো কারো কেন এতে অনীহা/ বিতৃষ্ণা ? এটার উত্তর দু’ ভাবে।
* ( ১) তিনি মেটেরিয়া মেডিকায় এত দক্ষ এবং মগজ এত নিখুঁত হিসাব দেয় যে রেপার্টরিকরণ লাগে না। এদের সংখ্যা বিরল। বিরোধিতার ভাষা কমজোরি।
*(২) রেপার্টরি কী,কী আছে এতে , কোথায় আছে, কীভাবে আছে , কীভাবে তার ব্যবহার করতে হয় , এর সুবিধা কী–তাই জানেনা ; – না জেনে না বুঝে নিজ অক্ষমতা/ অজ্ঞতা চাপা দিতেই বিরোধিতা করে। এদের বিরোধিতার ভাষাও জোরালো। তাদের ‘ আঙ্গুর ফল টক ‘ সিদ্ধান্ত ই সান্ত্বনা। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে রেপার্টরিতে যারা দক্ষ মেটেরিয়া মেডিকায়ও তারা অভিজ্ঞ।
উপসংহার
” স্মৃতির অপরিহার্য শর্ত হলো বিস্মৃতি”—-( মনোবিদ রিবো।) জন্মের পর থেকে আমাদের সামনে প্রতিনিয়ত ঘটনা ঘটছে, আমরা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখছি। আর এই শিখন স্থায়ী করতে ও স্মৃতির ধারণ ক্ষমতা বজায় রাখতেই আমরা ভুলে যাই, আমাদের ভুলতে হয়। হোমিও ঔষধের বিশাল লক্ষণ সমষ্টিও আমরা ভুলে যাই,আমাদের ভুলতে হয় । ‘স্মৃতির জন্য ই বিস্মৃতির প্রয়োজন। ‘ আর তা জাগ্রত করতেই বই পড়তে হয়। স্মৃতির মত মগজের প্রক্রিয়া করণ ক্ষমতা ও প্রাকৃতিক নিয়মেই কমতে থাকে ।
তাই উপায় খুঁজতে হয় বিকল্পের। আর এই বিকল্প পথই হ্যানিম্যান নির্দেশিত রেপার্টরি। হোমিওপ্যাথি যেমন বিজ্ঞান তেমনি গণিতও । আর গণিতের হিসাবের জন্যই রেপার্টরি। গণিত আর বিজ্ঞান একে অপরের পরিপূরক। হোমিওপ্যাথি মহাত্মা হ্যানিম্যান রোপিত মহীরুহ , অর্গানন তার শিকড় ‘ মেটরিয়া মেডিকা তার কাণ্ড , আর রেপার্টরি সে মহীরুহের সুমিষ্ট ফল। মেটেরিয়া মেডিকা ও রেপার্টরি একে অপরের পরিপূরক। রেপার্টরি পরিণত হ্যানিম্যানের প্রতিচ্ছবি।
হোমিওপ্যাথির যেমন সীমাবদ্ধতা আছে তেমনি রেপার্টরিরও সীমাবদ্ধতা অস্বীকার্য নয়। বিভিন্ন রেপার্টরিতে অসামঞ্জস্য লক্ষিত হয়। ভালো রেপার্টরিই এর সমাধান হতে পারে। ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে রেপার্টরির বিকল্প নেই।
মগজের কর্মক্ষমতাও নিয়ত নিম্নগামী। নাহলে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের “কাজের ছেলে ” কবিতার মত হতেই হবে — আজ নয়তো কাল ।
কাজের ছেলে
_যোগীন্দ্রনাথ সরকার।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল,চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়,”
” ছিঁড়ে দেবে চুল।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
বাহবা বাহবা – ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।
ওই তো ওখানে ঘুড়ি ধরে টানে, ঘোষদের ননী;
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি!
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!
এসেছি দোকানে-কিনি এইখানে, যত কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।
( ****মেটেরিয়া মেডিকা জানুন , রেপার্টরি শিখুন- প্রকৃত হোমিওপ্যাথ হউন। —-সেক্স এর চি0কিৎসা