কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষানিরীক্ষা সমন্ধে জেনে নিই। সাথে কোন টেস্ট কেন করা হয়((সংগৃহীত ও সম্পাদিত পোস্ট) –
১. CBC – Complete blood count
একটা ভালো অ্যানালাইজারে অর্থাৎ বড় বড় ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলোয় যে রিপোর্ট দেয় তা হলো-
-জ্বর হলে কোন কারণে জ্বর হচ্ছে তার একটা আইডিয়া নেয়ার জন্য (Widal Test করা হয় Typhoid আছে কিনা তার ধারণা নেবার জন্য।
-শরীরে রক্তের পরিমাণ কেমন আছে।
-রক্তের ঘাটতি থাকলে সেইটা আয়রণ বা ভিটামিনের অভাবে কিনা তার একটা ধারণা পাওয়া যায় বা অন্য আরো অনেকগুলো কারণ আছে রক্তশূন্যতার সেইসবের ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। (তার উপর ভিত্তি করে PBF/Iron profile থেকে শুরু করে Hb Electrophoresis সহ Bone marrow biopsy পর্যন্ত করা লাগতে পারে . অনেক সময় পাকস্থলীতে আলসার হলে বা কোলন ক্যান্সার হলে রক্ত কমে যায় তখন Stool for OBT ও করা হয় প্রাথমিক টেস্ট হিসেবে। তারপর Endoscopy/Colonoscopy পর্যন্ত করা হয়। এক কথায় একটা রক্তের পরীক্ষার উপর ভিত্তি করেই অনেকদূর আগানো যায়)
- অ্যালার্জি কেমন শরীরের ভেতর তার একটা ধারণা পাওয়া যায় (এলার্জির জন্য S.IgE নামক টেস্ট ও দেয়া হয়)
- ইনফেকশান বা প্রদাহ কেমন পরিমাণ তার ধারণা পাওয়া যায়।
-রক্ত জমাট বাধার উপাদানের পরিমাণ কেমন তা জানা যায়। (যেমন ডেংগু হলে Platelet কমে যায় অর্থাৎ রক্তপাত হবার প্রবণতা বেড়ে যায়। Dengue হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য Dengue NS1 কিংবা ICT for Dengue এবং Dengue IgM/IgG test ও করা হয়) - ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে কিনা তার ব্যাপারে ধারণা দেয়।
ইত্যাদি।
২. Urine RME – প্রস্রাবের পরীক্ষা
যা দেখি তা হলো-
-ইনফেকশান কেমন আছে।
- সুগার বা গ্লুকোজ যায় কিনা (ডায়াবেটিস আছে কিনা)
-প্রোটিন যায় কিনা ( কিডনির কোন সমস্যা বুঝতে)
-রক্ত যায় কিনা ( RBC থাকবে) - কিডনির ক্যান্সার বা পাথর আছে কিনা তার ধারণা পাওয়া যায়। ইত্যাদি।
৩. RBS – Random blood sugar
ডায়াবেটিস আছে কিনা সেই ব্যাপারে ধারণা নেয়ার প্রাথমিক টেস্ট (আদর্শ টেস্ট হলো FBS আর HbA1C%)। তবে একেবারে নতুন রোগি, ডায়াবেটিস হয়েছে কি না জানা নেই তাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হয়েছে কি না তা জানার জন্য আদর্শ টেস্ট হলো, FBS, CUS, এবং OGTT.
৪. Serum Creatinine
যেইসব রোগ বা অবস্থায় কিডনির সমস্যা হতে পারে / কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে কি না তার ব্যাপারে একটা ধারণা নেয়ার জন্য এই টেস্ট। (প্রেশার, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস এবং দীর্ঘদিনধরে ব্যাথার ঔষধ খাচ্ছে এমন রোগীর জন্য বাধ্যতামূলক একটা টেস্ট। ব্যথার ঔষধ দেয়ার আগেও এই পরীক্ষা করে নেয়া উচিত)।
৫. Lipid Profile
রক্তে চর্বির কী অবস্থা তা বোঝার জন্য (খুব ই গুরত্বপূর্ণ একটা টেস্ট। কেননা রক্তে চর্বি বেশি হলে হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেইন স্ট্রোক কিংবা লিভার ড্যামেজ অথবা প্যাঙ্ক্রিয়াটাইটিস এর মত মারণঘাতী ব্যাপার স্যাপার ঘটে। কাজেই যাদের হাই প্রেশার বা ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য বছরে অন্তত দুইবার এই চেক আপ অত্যন্ত জরুরী।)
৬. S. Bilurubin
জন্ডিসের কি অবস্থা তার একটা ধারণা নেয়ার জন্য প্রাথমিক টেস্ট .
কারো জন্ডিস হলে আরো কতগুলো পরীক্ষা একদম বাধ্যতামূলক বলা যায়-
যেমন কোন ভাইরাস দিয়ে হচ্ছে তা বোঝার জন্য Anti HAV IgM/Anti HEV IgM/HBsAg/Anti HCV সহ Prothombin Time/PT , ALP , SGPT/SGOT , Ultrasound এইসব সহ অন্যান্য টেস্ট লাগতে পারে।
কেন লাগে? কারণ একেক ভাইরাসের জটিলতা একেক রকম এবং সেইসব ক্ষেত্রে ট্রিটমেন্ট একেক রকম।
যেমন Hepatitis B কিংবা Hepatitis C দিয়ে হলে Liver cirrhosis সহ ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। Hepatitis A বা E দিয়ে হলে রেয়ার কেইসে Liver failure হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। সুতরাং সবগুলো চেক করে নেয়া উচিত
SGPT/SGOT/ Alkaline Phosphatase- লিভার কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ তা বোঝা যায় , অর্থাৎ লিভার ঠিকমতো কাজ করছে কি না/ লিভার ভালো আছে কিনা। বাইরের দেশগুলোতে ঔষধ দেয়ার আগে এই টেস্ট করা হয়। কেননা প্রায় প্রতিটি ঔষধ ই যেহেতু লিভারের উপর কাজ করে তাই লিভারের ফাংশানটা আগে দেখে নেয়া হয়।
Ultrasound- জন্ডিসের কারণে লিভারে প্রদাহ হলে লিভার বড় হয়ে যায় , কতটুকু বড় হলো তা দেখার জন্য।
PT- লিভারের সমস্যার কারণে রক্তপাত হবার সম্ভাবনা কতটুকু তা বোঝার জন্য। কেননা রক্ত জমাট বাধানোর জন্য কিছু উপাদান আছে যা লিভার তৈরি করে। এখন লিভার যদি আক্রান্ত হয় তাহলে সেইগুলা তৈরিতে ঝামেলা হবেনা? লিভারের রোগে ভুগতে ভুগতে শেষ পর্যন্ত লিভার সিরোসিস হয়ে গের কি না তা জানার জন্য উপরের টেস্ট গুলোর সাথে Fibro Scan of liver করা হয়।
৭. Serum Electrolytes
আমাদের শরীরে রক্তে কতগুলো উপাদান আছে যেমন Sodium , Potassium , Chloride , Bi Carbonate এইগুলা যদি ঠিকমতো না থাকে তাহলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। যেমন: শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে যায় কিংবা অজ্ঞান হয়ে যায়, খিচুনি হয় , মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হয়ে আসে, রোগী চারপাশে কি হচ্ছে সেই ব্যাপারে confused থাকে ইত্যাদি। (যেমন অনেক বেশি বমি বা ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটা করানো উচিত. )
৮. Serum TSH/ T3/ T4
হরমোন খুব গুরত্তপূর্ণ শরীরের ঠিকমতো কাজ করার জন্য। একটা উপাদান এইদিক ওইদিক হলে ঝামেলা শুরু হয়। আমাদের শরীরে অনেকগুলো হরমোন আছে । এইটা অনেক বিস্তারিত বিষয়। তারমধ্যে থাইরয়েড হরমোন অন্যতম। অনেকের গরম ই সহ্য হয়না , হাত পা অনবরত ঘামে , বুক ধড়ফড় করে। অনেকের আবার ঠান্ডা সহ্য হয়না , গরমের দিনেও গরম লাগেনা তেমন , শরীর ফুলে যায়।গলা ফোলা অর্থাৎ গলগন্ড কিংবা অন্যান্য থায়রয়েডের সমস্যা দেখার জন্য এইগুলা করা হয়। infertility / sterility এর কারণ কী তা জানার জন্যও থাইরয়েড হরমোন চেক করা হয়।
৯. Serum Uric Acid , CRP
বাত ব্যথার রোগীদের জন্য দেয়া হয়। যেমন রক্তে Uric acid এর পরিমাণ বেশি থাকলে গেটে বাত হতে পারে। SLE বাদে বেশিরভাগ বাত ব্যথাতেই CRP বাড়ে। এছাড়াও আর্থ্রাইটিসের জন্য R/A,R/F চেক করা হয়।
১০. Serum Testesterone , S. FSH , S. LH , S. Prolactin
কারো যৌন সমস্যা থাকলে কিংবা বাচ্চা না হলে অথবা মেয়ে মানুষের মোচ দেখা দিলে , মাসিকে সমস্যা থাকলে সাধারণত এইসব দেয়া হয়। অথবা পুরুষদের গাইনোকোমেস্টিয়া চেক করার জন্য এই হরমোনগুলো চেক করা হয়।
১১. BT /CT (bleeding time/Clotting time)
রক্তরোগ যেমন রক্ত জমাট বাধেনা কিংবা অল্পতেই রক্ত বেরোতেই থাকে এমন সমস্যার ব্যাপারে ধারণা দেয়।
১২. ECG,Echo, ETT, Angiograms
হার্টে কোন সমস্যা আছে কিনা তার প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্য। কাজেই কারোও বুকে ব্যথা হলেই এইটা করা উচিত। পরে Echo ও করা যেতে পারে। Echoতে সমস্যা থাকলে ETT, ETT তে সমস্যা থাকলে Angiogram করা দরকার। তবে invasive coronary angiogram এর চেয়ে CT coronary angiogram খরচ বেশি হলেও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বেশি।
১৩. একজন অপারেশান এর রোগীর জন্য কিছু routine test যেমন CBC/Urine RE/ECG/Chest Xray/HBsAg/Anti HCV/RBS/BT/CT ইত্যাদি এইসব করা হয়। একটা রোগীকে অজ্ঞান করা হবে। অজ্ঞান করানোর পর জ্ঞান ফিরবে কিনা সেই ব্যাপারে আইডিয়া নেয়ার জন্য তার আগে শরীর চেক আপ করে নিতে হবেনা? কারন, অনেক সময় দেখা যায় অন্য রোগের জন্য অপারেশন করতে হবে এমন রোগিদের ECG করতে গিয়ে heart block পাওয়া যায়।
১৪. একটা গর্ভবতী মহিলার জন্য CBC/Urine RE/S.TSH/Ultrasound/RBS/HBsAg/Anti HCV/VDRL/Blood grouping ইত্যাদি এইসব টেস্ট বাধ্যতামূলক . কেননা Diabetes বা থায়রয়েডের সমস্যা থাকলে বাচ্চার জন্য অনেক ঝামেলার , বিশেষ করে বাচ্চা ঘনঘন abortion এর অন্যতম কারণ Thyroid এর সমস্যা। আর মায়ের শরীরে কিছু রোগ থাকলে তা বাচ্চার শরীরেও সংক্রমিত হতে পারে তাই সেইগুলাও চেক করা হয়।
১৫. একজন ডায়াবেটিস বা হাই প্রেশারের রোগী যেইসব টেস্ট প্রতি বছর করা উচিত সেইগুলা হলো-
CBC/Urine RE, /S. Creatinine/Lipid Profile/ECG সহ চোখটাও পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত . কেননা ডায়াবেটিস এবং হাই প্রেশার হচ্ছে নীরব ঘাতক। এরা ব্রেইন/হার্ট/কিডনি/চোখ/পা এইসবের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে মৃত্যু ডেকে আনে।
Www//amarhomoeo.com
Youtube //amarhomoeo
imo what’s up bekash 01721418696