যৌন দূর্বলতা আজ আমাদের সমাজে একেবারেই একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে । যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে অনেক তরুণরাও নিজেদের যৌনতায় দুর্বল ভেবে থাকেন । কিন্তু দেখা যায় বিবাহিত জীবনে বাংলাদেশে অধিকাংশ পুরুষই যৌন দূর্বলতা সমস্যায় আক্রান্ত হন । তারও রয়েছে বিভিন্ন কারণ । অথচ দেখা যায় অধিকাংশ মানুষেরই এ বিষয়ে সংকোচ বেশি থাকার কারণে প্রকৃত তথ্য থেকে অনেকে বঞ্চিত হন, এই দূর্বলতার কারণে অনেক কুসংস্কারও সমাজের মানুষের মনে বাসা বেধে আছে । আর এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর অসাধু যৌন সামগ্রী বিক্রেতারা নানা প্রকার কথায় ভুলিয়ে কোমলমতি এবং সহজ সরল মানুষদেরকে প্রতারিত করে থাকে । বাস্তব জ্ঞানটা না থাকার কারণে অনেক পুরুষকেই দেখা যায় নিয়মিত নানা প্রকার যৌন উত্তেজক ঔষধ সেবন করতে । অথচ তারা জানেনই না যে তারা কি ভয়াবহ বিপদের দিকে এগোচ্ছেন ।
বিষয়টা সম্পর্কে আরো ভাল ধারণা লাভের জন্য আসুন জেনে নেই – একজন পুরুষের যৌন বিষয়ক শারীরবৃত্তীয় কাজ গুলো কি কি ।
★★ যৌন ইচ্ছা থাকা ।
★★ লিঙ্গত্থান বা ইরেকশন হওয়া, যেটি পুরুষাঙ্গে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবার কারনে হয়ে থাকে ।
★★ পুরুষাঙ্গ দিয়ে সিমেন নির্গমন ।
★★ পেনিস বা পুরুষাঙ্গের শিথিলতা ।
এসব কিছুর মধ্যে পুরুষের লিঙ্গ উত্থানে সমস্যাটিই প্রকট সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে । এই সমস্যাটি নানাবিধ কারনে হতে পারে । তবে এটা জেনে রাখা দরকার যে আমাদের সমাজের মানুষের বেলায় দেখা গেছে এর বড় একটা কারন হলো মনস্তাত্বিক, এছাড়া কিছু হরমোনের অভাব অথবা মস্তিস্কের রোগের কারনেও এমনটি হতে পারে । পুরুষাঙ্গের ধমনি সরু হয়ে যাওয়া কিংবা শিরার যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত ধারণ করতে না পারাটাও এমন সমস্যার জন্ম দেয় ।
এবার পুরুষের যৌন দূর্বলতা সৃষ্টির পেছনে নিচের কয়েকটি কারণ লক্ষ্য করুন :-
★★ আমাদের দেশে ছেলেরা অল্প বয়স থেকেই নানা প্রকার যৌন অনাচারে লিপ্ত হয়ে যখন বিয়ের বয়স হয় তখন দেখা যায় তার নানা প্রকার যৌন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং তার সাথে তীব্র যৌন দূর্বলতা তো থাকেই ।
★★ মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে শারীরবৃত্তীয় এবং মানসিক যেসব পরিবর্তন হয় তা অনেক সময় এতে প্রভাব ফেলে অর্থাৎ পুরুষের যৌন দূর্বলতার সৃষ্টি করে থাকে ।
★★ কিছু কিছু রোগের কারনে পুরুষের এমন সমস্যা হতে পারে যেমন- ডায়াবেটিস হওয়া, স্থুলতা, অন্য এন্ডোক্রাইন বা হরমোনের সমস্যা দেখা দেয়া, প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হওয়া ইত্যাদি ।
★★ ধুমপান একদম প্রত্যক্ষ ভাবে লিঙ্গত্থান ব্যর্থ হবার একটি বড় কারন ।
★★ মেরুদন্ডের অভ্যন্তরে যে মজ্জা থাকে ( spinal cord ) তাতে আঘাত পেলে কিংবা তা রোগাক্রান্ত হলেও এমন সমস্যা দেখা দেয় ।
★★ এ ছাড়া ডিপ্রেসন, এঙ্গার কিংবা বিভিন্ন মানসিক চাপ বা উত্তেজনার কারনেও লিঙ্গোত্থানে সমস্যা দেখা দেয় ।
★★ পুরুষাঙ্গের নিকটবর্তী স্থানে রেডিওথেরাপী দিলেও এমন সমস্যা হতে পারে ।
★★ কিছু কিছু মেডিসিন আছে যা পুরুষের অমন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, এর মধ্যে আছে মানসিক রোগের মেডিসিন, কিছু স্টেরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের মেডিসিন, নেশা উদ্রেককারী মেডিসিন যেমন কোকেন, গাজা, অধিকমাত্রায় এলকোহল সেবন ইত্যাদি ।
কার্যকর চিকিৎসা :-
আজকাল অনেক অসাধু ব্যক্তিদের দেখা যায় দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্লগে এবং ওয়েবসাইটে পুরুষের যৌন দূর্বলতা দূরীকরণে ভায়াগ্রা এবং সিলডেনাফিল এর মত মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী ঔষধ ক্রয় করার জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে । অথচ এই ঔষধগুলি একেবারে সেক্সলেস অবস্থায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকরা অতি সাবধানতার সাথে প্রেসক্রাইব করে থাকেন । কারণ এইগুলি অনেকের ক্ষেত্রে এতটাই মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যে সেবনকারী হৃদপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারাও যেতে পারেন । সবচেয়ে বড় কথা হলো এইগুলি পুরুষের যৌন দূর্বলতা সমস্যার কোনো সমাধানই করে না । শুধুমাত্র লিঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য রক্তের গতি বাড়িয়ে এটাকে উত্তেজিত করে রাখে অর্থাৎ আপনাকে সারা জীবন ধরেই এই ঔষধ খেয়ে যেতে হবে । আর এক সময় দেখবেন আপনার যৌন জীবন তথা পুরু জীবনেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কালো অন্ধকার নেমে এসেছে ।
অথচ পুরুষের যৌন দূর্বলতা যে কারণেই সৃষ্টি হোক না কেন যথাযথ হোমিওপ্যাথি চিকিত্সায় খুব সহজেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এখানে নেই কোনো প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া । অল্প কিছু দিনের প্রপার হোমিও চিকিত্সাতেই যৌন দূর্বলতা সৃষ্টি হওয়ার পেছনে যত কারণ থাকে সব গুলিই একেবারে মূল থেকে নির্মূল হয়ে যায় এবং শরীরে আবার আগের মত সুস্থ অবস্থাটা তৈরী হয়ে যায় । তখন আর কোনো ঔষধই খাওয়ার দরকার পড়ে না । দৈনন্দিন স্বাভাবিক খাবার দাবার থেকেই আগের মত যৌন শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে । তাই যৌন সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যায় সবার আগে হোমিওপ্যাথিকে অগ্রাধিকার দিন । অন্তত এটা বলতে পারি, ট্রিটমেন্টটা যদি যথাযথ হয় তাহলে হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা নিয়ে কেউ ঠকবেন না ।
সেক্স এনাটমি– আরিফ মাহমুদ সাহাবুল
সেক্স সাইন্স ( যৌনবিজ্ঞান ) :- সেক্স অর্থ যৌনতা বা যৌন উত্তেজনা । এই সেক্স শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘সেক্সাস’ থেকে । পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যার কোনো সেক্সুয়াল অনুভূতি নেই । প্রায় প্রতিটি মানুষই যৌন উত্তেজনা, যৌন মনোভাব, যৌন চিন্তা ও কামনা-কল্পনা করতে পছন্দ করে । মানুষের জীবনের সাথে সেক্স ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, মিশে আছে রক্তের প্রতিটি বিন্দুর সাথে ‘জেনেটিক কোডের ধারাবাহিকতায়’। জেনেটিক হল প্রজনন বা জন্ম সৃষ্টি সংক্রান্ত ব্যাপার স্যাপার ।
সেক্স থেকেই উদ্ভব হয়েছে মডার্ন সেক্সোলোজি বা যৌন বিজ্ঞান । মনে হতে পারে সেক্স এতো শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব মানুষই জানে । হ্যাঁ, জানে ঠিকই কিন্তু্তু পুরোপুরি জানে না । জানে না এর সুশৃখলিত কারুকার্যময় বিজ্ঞান ভিত্তিক নিয়ম কানুন । তাইতো তৈরি হয়েছে যৌন বিজ্ঞানের । আর যে জিনিসটায় বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগে সে জিনিস হয়ে ওঠে আরো সুচারু আরো রুচিসম্পন্ন এবং আরো সহজসাধ্য গ্রহণীয় । সেক্সকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বিশেস্নষণ করতে সবসময়ই মানুষ এক প্রকার অহেতুক লজ্জাবোধ করে এসেছে । সমাজ, রাষ্ট্রনীতি সবাই কোমর বেঁধে এক সঙ্গে যৌনবোধের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে । সেন্ট ভিক্টরের ধর্ম মন্দিরে ধর্ম যাজকগণের যৌনবোধ সংযত করার জন্য বছরে প্রায় পাঁচবার তাদের দেহের রক্ত বের করে নেয়া হত । দুনিয়া জুড়ে কোনো যুগে কোনো দেশেই এরকম ব্যবস্থার কোনো কমতি ছিল না । কিন্তু যৌন জোয়ারকে কে আটকাতে পারে । কোনো মানুষেরই যৌনবোধের তীব্রতা তাতে কিছুমাত্র কমেনি । বরং দিনের পর দিনই এই যৌন অনুভূতি মানুষের মাঝে বাড়তেই থেকেছে । যা এখনও পর্যন্ত চলছে, চলবে পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত বা কেয়ামত হওয়ার আগ মুহর্ত পর্যন্ত ।
সেক্সুয়াল অনুভূতি বা যৌনতা কি ? সহজ কথায় বলা যায় যে, এক লিঙ্গের প্রাণী বিপরীত লিঙ্গের প্রাণীর দিকে যে দৈহিক এবং মানসিক আকর্ষণবোধ করে তাই হল সেক্সুয়াল অনুভূতি বা যৌনতা । যৌনবোধ আছে বলেই মানুষ এত সুন্দর । সুন্দর তার বাহ্যিক প্রকাশময়তা । যৌনতা বা সেক্সকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা ভারতীয় পন্ডিতগণও উপলব্ধি করেছিলেন । গ্রীক ও মিশরীয় পন্ডিতগণ ও প্রসঙ্গক্রমে যৌনাঙ্গের পরিচয় ও সন্তান জন্মের বিষয় উল্লেখ করেছেন । তবে সুশৃখল পদ্ধিতিতে যৌন তত্ত্বের বিশ্লেষণের অনুপ্রেরণা সম্ভবত ভারতীয় পন্ডিতগণই দিয়েছিলেন । খ্রীষ্টীয় প্রথম দিক দ্বিতীয় শতাব্দীতে বাৎসায়ন নামক এক পন্ডিত ‘কামসুত্র’ নামক একখানি সুন্দর পুস্তক রচনা করেছিলেন । ব্যাৎসায়নের পূর্বেও প্রায় দশজন পন্ডিত নারী-পুরুষের সেক্স বৃত্তিকে অধ্যয়নের বিষয়ীভূত করার উপকরণ রেখে গিয়েছিলেন, ব্যাৎস্যায়নের কামসূত্র সেই প্রাচীন হলেও তাতে বিষয়টি এমন ধারাবাহিক প্রণালীতে আলোচিত হয়েছে যে, তা ভাবলে বিস্মিত হতে হয় । সেসব আলোচনার মাঝেও যে অন্তর্দৃষ্টি দেখতে পাওয়া যায় তা কিছুটা হলেও আধুনিক বৈজ্ঞানিকের মত । তবে পুরাতন পুঁথি হিসেবে এটি যৌনতত্ত্ববিদদের কাছে আদরণীয় হলেও সাধারণ পাঠক পাঠিকা এগুলো হতে তেমন কোনো বিশেষ উপকার লাভ করতে পারবেন না । কারণ এসব পুস্তক প্রণয়নের সময়ে শরীর বিদ্যা বা এনাটমি অপূর্ণাঙ্গ ছিল এবং সেসব কারণে এসব পুস্তকগুলোতে অন্ধবিশ্বাস ও কল্পনার প্রভাবই বেশি রয়ে গেছে । ব্যাৎসায়নের কামসূত্র ছাড়াও সংস্কৃত সাহিত্যে আরও কিছু যৌনশাস্ত্রের পুস্তক পাওয়া যায় এদের মধ্যে কোক্কা পন্ডিতের কামশাস্ত্রই প্রধান ।
কোক্কা পন্ডিত বেনুদত্ত নামক এক রাজার মন সন্তুষ্টির জন্য ‘কোক শাস্ত্র’ বা রতি রহস্য নামক পুস্তক প্রণয়ন করেছিলেন । এই কোক্কা পন্ডিতের উক্ত পুস্তক তদানীন্তন ও পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে রতি শাস্ত্র বা সেক্সোলোজি অবশেষে শুধু মাত্র কোক শাস্ত্র নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছিল । সংস্কৃত ভাষায় রতি শাস্ত্র বা সেক্স বিষয়ক শেষ পুস্তক কল্যাণ মলল নামক এক পন্ডিতের রচিত আনন্দ রঙ্গ । এই পুস্তকটি খ্রীষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দিতে লোদী পরিবারের কোনো এক রাজার অনুরোধে পন্ডিত কল্যাণ মলল কর্তৃক রচিত হয়েছিল । এছাড়াও ঋষি নাগার্জুন তার প্রিয় শিষ্যকে উপদেশ দেয়ার ছলে সিদ্ধ বিনোদন নামক এক প্রকার যৌন শাস্ত্র প্রণয়ন করে গেছেন বলে বর্ণিত আছে ।
রোমীয় সম্রাটগণও সেক্স বা যৌনতা বিষয়ে যথেষ্ট মনোনিবেশ করেছিলেন । সেজন্য ক্যাটুলাস, টিবুলাস, পেট্রোনিয়াস, মার্শাল, জুভেনাল প্রভৃতি বহু কবি ও পন্ডিতরা তাদের লেখায়, কবিতায় রস বচনীয় এবং প্রবন্ধে সেক্স বা যৌনতা বিষয়ে আলোচনা করে গেছেন । ইউরোপের প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড প্রথম এবং পরে হ্যাভলক এলিস প্রভৃতি বিজ্ঞানীরা সেক্সোলোজিস্ট বা যৌন বিজ্ঞান সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক যুক্তিপূর্ণ গবেষণাসহ বিশ্লেষণ করেছেন ।
যৌন পথ প্রদর্শক ফ্রয়েডঃ ইউরোপের ভিয়েনা শহরের বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসক ফ্রয়েডই প্রথম আবিষকার করেন যে, মানুষের শরীরের মত মনেরও রোগ হয় । সম্ভবত তিনিই সর্ব প্রথম গবেষণার দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, মানুষের মনে প্রতিনিয়ত যে সব চিন্তা-ভাবনা, ইচ্ছা-কামনা ও অনিচ্ছার সৃষ্টি হচ্ছে তারও একটা কারণ রয়েছে । আর যা কিনা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দ্বারাই প্রমাণ করা সম্ভব । আর এই মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা-ভাবনার পেছনে রয়েছে নারী-পুরুষের যৌন জীবনের প্রেরণা । ফ্রয়েডই প্রথম যিনি মানুষের বিচিত্র সব মানসিকতার পূর্ণ বিশ্লেষণ করে সেই প্রাচীন চিরাচরিত ধারণাটা বদলে দিয়েছেন । বিংশ শতাব্দির চিন্তার জগতে তার এই অবদান মানব সমাজে যেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে । যৌন মনস্তত্ত্ব ( সেক্সুয়াল সাইকোলজি ) এবং মনোসমীক্ষণ বা সাইকো এনালাইসিসের শুরু বিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড থেকেই । আর সেই কারণে সারা বিশ্বের বিদগ্ধ মানুষ জনের বিচারে যৌন মনো বিজ্ঞানে ফ্রয়েডের স্থান সবার আগে । ফ্রয়েডের মতে কামভাবটা নারী-পুরুষের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি ( ন্যাচারাল টেনডেন্সি ) এবং এর অনুপস্থিতি ঘটলে কোনো নারী কিংবা পুরুষ স্বয়ংসম্পর্ণ হতে পারে না। সিগমন্ড ফ্রয়েড একাধারে যৌন মনোবিজ্ঞানের প্রথম বৈজ্ঞানিক, তারপর প্রথম চিকিৎসক এবং প্রথম যৌন পথ প্রদর্শক । তার অবদান চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভুলবার নয় । তার রচিত ‘Three contributions to the theory of sex’ নামক গবেষণা ধর্মী বইটি মেডিকেল বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ।
যৌন বিজ্ঞান ও হ্যাভলক এলিসঃ শরীর বিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের দিক থেকে যৌন শাস্ত্রের সক্ষ্ম গবেষণার জন্য বর্তমান জগতে হ্যাভলক এলিসের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এই বিশ্ববিশ্রুত মনীষীর একনিষ্ঠ বিশ্লেষণ হিসেবে তার ‘Studies in the psychology of sex’ নামক সুবৃহৎ ও তথ্যপূর্ণ গ্রন্থটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে । সেক্স লাইফ সম্পর্কে তিনি বিজ্ঞানসমমতভাবে রীতিমতো খোলামেলা আলোচনা করেছেন বলেই তিনি পথিকৃৎ হয়ে আছেন আজও । যৌন মনোদর্শনের উপর তার লেখার সম্ভার প্রচুর সমৃদ্ধ । সারা বিশ্বে যেসব বইগুলো আজও সবার কাছে সমাদৃত । জীবনের প্রায় প্রতিটি গ্রন্থই তার অনন্য হয়ে আছে । একথা অনস্বীকার্য যে, সত্যিই এলিস তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছিলেন । সেকালের অন্ধ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন বিষয়গুলোর ওপর বর্তমান বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তিনি এমন স্বচ্ছভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যা সবার কাছে গ্রহণীয় হয়ে আছে ।
বিজ্ঞানী এলিসের কাছে কোনো সেক্সুয়াল আচরণই বিকৃত নয় কিংবা নয় অস্বাভাবিক । তিনিই প্রথম মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন যৌনতা স্বাভাবিক কিংবা কোনটি অস্বাভাবিক বা বিকৃতির পর্যায়ে পড়ে তা বিচার করেছেন । মোট কথা হল, কোনো যৌন আচরণকেই তিনি বিকৃতি বা আনন্যাচারাল বলে মনে নিতে চাননি তার যৌনগ্রন্থে । আর এ থেকেই বোঝা যায় যে সেক্স বিষয়ে বিজ্ঞানী এলিসের দৃষ্টিভঙ্গি কতই না খোলামেলা ছিল ।
সেক্স বিজ্ঞান ও ডাঃ কিনসেঃ ডাঃ কিনসে ও তার সহকর্মীদের গবেষণার ফল যৌন সাহিত্যে এক উল্লেখযোগ্য অবদান । তার ‘Sexual behaviour in the human male’ এবং ‘Sexual behaviour in the human female’ প্রায় পনেরো বছরের তথ্যানুসন্ধানের ফলে রচিত হয় । আমেরিকায় পুরুষদের যৌনতা সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করবার প্রয়াসে ডাঃ কিনসে এবং তার সহকর্মীরা প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিনীর কাছ হতে প্রশ্নচ্ছলে তাদের বিভিন্নমুখী যৌন অভিজ্ঞতা ও অভিমতগুলো তালিকাভুক্ত করেছেন । এসব প্রশ্নগুলোকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়; বিবাহপূর্ব এবং বিবাহোত্তর যৌন অভিজ্ঞতা বিষয়ে । একথা বলা যেতে পারে যে, ডাঃ কিনসের বই দুটি যৌন ব্যবহারের তথ্য সমাবেশের দিক হতে যৌন সমস্যার নতুন আলোকপাত করেছেন । তার সমস্ত মতামত অবশ্য সমানভাবে গ্রহণযোগ্য নয় । কিন্তু তথ্যানুসন্ধানে অক্লান্ত কর্মী হিসেবে এবং সেক্স সাইন্সে অমূল্য তথ্য পরিবেশক হিসেবে ডাঃ কিনসে অমর হয়ে থাকবেন ।
আধুনিক সেক্স বিজ্ঞানে মাস্টার এন্ড জনসনের অবদানঃ কিনসের অনুসন্ধান ও তথ্য প্রকাশের প্রায় দশ বছর পর আরও দু’জন চিকিৎসা বিজ্ঞানী এক নতুন পদ্ধতিতে নারী-পুরুষের সেক্স লাইফ সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা করেন । এরা হলেন ডাঃ মাস্টার এবং মিসেস ভার্জিনিয়া জনসন । এরা দীর্ঘদিন গবেষণা করে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল ‘হিউম্যান সেক্সুয়াল রিসপন্স’ নামক গ্রন্থ্থ প্রকাশ করেছেন । এরা যে পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সে পদ্ধতি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ । এই গবেষকরা প্রত্যক্ষভাবে নারী-পুরুষের যৌনমিলনকে যন্ত্রাদির সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করেন । তাদের গবেষণালব্ধ বইটি আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে । এই দুই গবেষক আমেরিকার সেন্টলুয়িস-এ রিপ্রোডাক্টিভ বায়োলজি রিসার্স ফাউন্ডেশন সংস্থায় সপ্তাহে গড়ে ৮৫ ঘন্টা করে নিয়মিতভাবে দীর্ঘ এগারো বছর যৌনতা সেক্সের ওপর গবেষণা করেন । এই দীর্ঘ গবেষণাকালে তারা নারী-পুরুষের দেহের অভ্যন্তরে যৌনমিলনকালে কি ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় তা নথিভুক্ত করেছেন । এই বিজ্ঞানীদ্বয় নর-নারীর যৌনানুভূতি বা সেক্সুয়াল রেসপন্সকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন । এগুলো হলো-
★★ উত্তেজনা স্তর ( একসাইটমেন্ট ফেস )
★★ চরম উত্তেজনা স্তর ( প্লাটু ফেস )
★★ চরম তৃপ্তি বা সুখ লাভের স্তর ( অর্গাজম ) এবং
★★ বিরতির স্তর ( রিসলোশন ফেস ) ।
এই গবেষকরা গভীর মনোনিবেশ সহকারে যৌন বা সেক্স উত্তেজনাকালে দৈহিক প্রতিক্রিয়াগুলোকে পুখানুপুখরূপে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং করেছেন চমৎকার বিশেস্নষণ-বর্ণনা । এদের গবেষণা আধুনিক সেক্স সাইন্সকে দারুণ উন্নতি করেছে যা কি না যৌন বিজ্ঞানের ইতিহাসে আন্তরিকভাবে অভিনন্দিত ও গৃহীত হয়েছে l
>< ইন্টারনেট হইতে.Amar homoeo Dr adnan sami homoeopathy