নেট্রাম ফসফরিকাম
[ NATRUM PHOSPHORICUM ]
➡️ (ক) সাধারণ নামঃ- ফসফেট অব সোডা (খ) সমনামঃ- সোডিয়াম ফসফেট, নেট্রাম ফসফাস, ফসফাস নাইট্রিকাস, সোডিয়াম ফসফাস। (গ) সংক্ষিপ্ত নামঃ- নেট্রাম ফস (Nat.Phos)
⏭️রাসায়নিক ফরমুলাঃ- [ Na2HPO412H2O]
⏭️ রাসায়নিক তত্ত্বঃ- এর আঃ গুঃ ১.৫৫ । এটা কার্বনেট অব সোডিয়ামের সহিত অর্থো-ফসফরিক এসিড মিশ্রিত করে অথবা অস্থিকে ভস্ম করে প্রস্তুত হয়। এটা স্ফটিকাকার ও এটাতে ১২ টি জলের অনু বিদ্যমান। এটা মৃদু শীতল লাবনিক আশ্বাদ বিশিষ্ট। দুই অংশ উষ্ণ ও ছয় অংশ ঠাণ্ডা জলে দ্রবিভুত হয়। এলকোহলে দ্রব নয়, জলীয় দ্রব।
⏭️ ঔষধ প্রস্তুত প্রনালীঃ- বিশুদ্ধ ফসফেট অব সোডা নিয়ে হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়।
⏭️হোমিওপ্যাথিক স্বীকৃতিঃ- ডাক্তার ফ্যারিংটনের তত্বাবধানে এটা পরীক্ষা করা হয় এবং এটা এলেনের এনসাইক্লোপিডিয়ার দশম খণ্ডে লিপিবদ্ধ করা হয়।
⏭️ দৈহিক স্বীকৃতিঃ- এই লবণ এক হাজার অংশ রক্তে, স্নায়ুতে ও মস্তিকে এবং কোষের দ্রব পদার্থে যথাক্রমে ০, ৩, ০, ৫, অংশ বর্তমান থাকে। শরীরে এই লবণ থাকার জন্য শরীরের ল্যাকটিক এসিড রাসায়নিক বিয়োগে কার্বনিক এসিড ও জল এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়।
⏭️ক্রিয়ার ক্ষেত্রঃ- এটা অস্থি, ফুসফুস এবং উদর সম্বন্ধীয় যন্ত্রাদির উপর কাজ করে। আধুনিক কালে এই ঔষধের জ্ঞান ডাঃ সুসলারের জন্য অনেক বৃদ্ধি হয়েছে। এই গন্ডমালা বা স্ক্র-ফুলা, টিউবারকিউলোসিস প্রভৃতির প্রধান ঔষধ। নেট্রাম ফস অল্প মাত্রায় চর্মের নিম্নে ইনজেকশন দ্বারা প্রয়োগ করলে মর্ফিয়া সেবনের ইচ্ছা এবং মর্ফিয়ার বিষক্রিয়া নষ্ট করবে।
⏭️প্রধান চরিত্রগত লক্ষণঃ- ১) রাত্রে ভীতিকর উৎকণ্ঠা, ঘুম ভাঙ্গলে ঘরের আসবাবপত্র মানুষ বলে মনে করে ও ভয় পায়। ২) সন্ধিবাত। ৩) প্রমেহ পীড়া – হলুদ রঙের পুজ স্রাব।। ৪) জিহ্বার পশ্চাতে হরিদ্রা বর্ণের লেপ। ৫) কৃমি জনিত শয্যামুত্র। ৬) পিত্ত শিলা। ৭) সমুদয় স্রাবই হরিদ্রা বর্ণের। ৮) ভেদ বমন অম্লযুক্ত। ৯) অজীর্ণ ও অম্ল লক্ষণে ক্ষয়কাশি। ১০) কৃমি জনিত কলেরা। ১১) সর্বপ্রকার কৃমি লক্ষন ও কৃমির জন্য অস্থির। ১২) অম্লস্রাব নিঃসরণ হেতু বন্ধাত্ব।
⏭️ মানসিক লক্ষন ও অবস্থাঃ- ১) স্মরণ শক্তি কম। ২) নৈরাশ্যে ভরা । ৩) উত্তেজিত, খিটখিটে, ও সামান্য কারণেই বিরক্তি বোধ করে। ৪) ঘুম ভাঙ্গার পর রোগীর মনে হয় তার ঘরে অনেকগুলি লোক জমা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে এটা তার ঘরের আসবাবপত্র। ৫) কখনও মনে হয় তার পাশের ঘরে বহু লোক চলাচল করছে। ৬) অত্যন্ত মানসিক অবসন্নতা। ৭) অলস ও উচ্চাকাংখা শুণ্য। ৮) সর্বদাই শংকিত থাকে, কখন কি ঘটনা ঘটিবে এই ভয়।
⏭️প্রয়োগ ক্ষেত্রঃ- শিশুদের অত্যধিক চিনি সেবন জনিত- অম্লজনিত পীড়া, অম্লউদগার, অম্ল বমি, সবুজাভ উদারাময়, বেদনা জ্বর সহ আক্ষেপ, পিত্তশুল, কমলা, পিত্তজনিত শিরঃপীড়া, বহুমুত্র কৃমি জনিত কলেরা, কৃমি জনিত শয্যামুত্র, সন্ধিবাত প্রভৃতি।
✴️ ১) মস্তিষ্কের পীড়াঃ- দধি সেবনে শিরঃ পীড়া। মাথার উপরে বেদনা যুক্ত শিরঃ পীড়া। প্রাতে বিছানা থেকে উঠলেই মস্তিষ্কের উপরি ভাগে বেদনা যুক্ত শিরঃ পীড়া আরম্ভ হয় এবং সেই সঙ্গে তালুর উপরে হরিদ্রাব বর্ণের সরের মত দাগ। মাথার উপরে এত চাপ ও উত্তাপ বোধ হয় যে মনে হয় যেন মাথাটি কেটে যাচ্ছে। পাকস্থলির অম্লজনিত রোগ সহ মাথাঘোরা, শিরঃ পীড়া প্রভৃতি।
✴️২) চক্ষুর পীড়াঃ- সোনার ন্যায় বর্ণের পনীরের মত গাড় পদার্থ চক্ষু থেকে নির্গত হয়। চোখ উঠে হলুদ বর্ণ পনীরের ন্যায় পদার্থের দ্বারা প্রাতে চক্ষুর পাতা জুড়িয়া যায়। চক্ষুর মনির সামনে পুঁজ সঞ্চয়। চক্ষু দিয়ে জ্বালাকর জল পড়ে, চক্ষুর সামনে আগুনের ফুল্কি দেখে। অন্ত্রের উত্তেজনা ও কৃমিজনিত টেরা দৃষ্টি, রোগীর চক্ষু উঠা, চক্ষুর দৃষ্টি শক্তির হ্রাসসহ মনে হয় চক্ষুর উপরে একটি পাতলা পর্দা রয়েছে।
✴️৩) কর্ণের পীড়াঃ- পাকস্থলির গলযোগ, অজীর্ণহেতু কর্ণ আরক্ত, উত্তপ্ত, চুলকানি, ও জ্বালাযুক্ত, উক্ত স্থানের ক্ষত থেকে হরিদ্রাবর্ণের স্রাব হয়। হরিদ্রাবর্ণের মামড়ি পড়ে। শয়ন করবার পর কানে সু সু শব্দ হয়। কখনও এমন শব্দ শুনতে পায় যেন উচ্চ স্থান থেকে কোন পাত্রে ফোটা ফোটা করে জল পড়ছে। কর্ণে গর্জন ধ্বনি। কানের ভেতরে ও বাইরে ছুচ ফোটার মতন যন্ত্রনা।
✴️ ৪) নাকের পীড়াঃ- অম্ল বা কৃমি লক্ষণসহ নাক খোটে, নাক চুলকায়। সকালে নাক থেকে দুর্গন্ধ বের হয় যা রোগী নিজেই অনুভব করে। নাকের ক্ষত এবং তাতে হলুদ মামড়ি, নাক থেকে হলুদ বর্ণের গাঢ় সর্দি।
✴️৫) গলার পীড়াঃ- আদ্র পনিরের মত হলুদ বর্ণের ময়লা জিহ্বার পিছনে কোমল তালুতে, টনসিল এবং আল-জিহ্বায় দেখা যায়। গলার যে কোনো স্থানের প্রদাহে এই লক্ষন থাকে। পাকস্থলির অম্লপীড়া সহ ডিপথিরিয়ার ন্যায় পীড়া। গলার ভিতর পুটুলি থাকার অনুভুতি। এটা পানীয় দ্রব্য গলায় ধারনের পর বৃদ্ধি হয়। গলার শেষ প্রান্তে ঘন হলুদ বর্ণের শ্লেষ্মা দেখা যায় বিশেষত রাত্রে বৃদ্ধি হয়।
✴️৬) পাকস্থলির পীড়াঃ- অতিরিক্ত ল্যাকটিক এসিড জনিত অম্ল পীড়া এবং উদগার উঠে। পাকস্থলিতে ক্ষত। এই স্থানে খাওয়ার পর বেদনা। অম্ল বমন, ক্ষুধাহীনতা, অজীর্নসহ অম্ল উদগার বিশিষ্ট জিহ্বা, মুখে অম্ল স্বাদ, আহারের দুই ঘন্টা পরে বেদনা হয়। অম্ল জল বমন ও দইয়ের মত বমন। শিশুদের অম্লের পীড়া সহ উদর বেদনা, সবুজ বর্ণ অম্লগন্ধযুক্ত মলের মত বমন। কৃমি জনিত পাকস্থলিতে বেদনা, পাকস্থলি খালি বোধ ও মধ্যস্থলের তরুন অস্থির উপর ভারবোধ। পিত্তের অভাব জনিত তৈলাক্ত পদার্থ হজমে ব্যাঘাত।
✴️ ৭) শ্বাস-যন্ত্রের পীড়াঃ- শ্লেষ্মাঘটিত পীড়াদির মধ্যবর্তি ঔষধ রূপে এটা অতি প্রয়োজনীয় ঔষধ, যদি এর সহিত অম্লরোগ লক্ষণ থাকে, যুবকদের বংশগত ক্ষয়কাশ, শরীর ক্ষয়, বক্ষাস্থির নিম্নদেশে এবং পঞ্জরাস্থির মধ্যস্থ পেশীতে ক্ষতবৎ বেদনা, বক্ষ বেদনা চাপনে এবং গভীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস নির্গতে বৃদ্ধি।
✴️৮) স্নায়বিক পীড়াঃ- অন্ত্রে কৃমিজনিত বক্র বা টেরা দৃষ্টি ও মুখমণ্ডলের পেশীর স্পন্দন, মানসিক পরিশ্রম এবং অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় সেবা, স্নায়ুবিকার, অবসন্নতা সহ মনে হয় পাকস্থলি খালি হয়ে গেছে, ঘাড়ের আক্ষেপজনিত পীড়া, স্পন্দন, হৃদস্পন্দন, শরীর ভারবোধ যেন পক্ষাঘাত হয়েছে। এছাড়া অবসন্নতা বোধ।
✴️ ৯) মুত্রযন্ত্রের পীড়াঃ- অম্ল লক্ষণসহ সর্বদা প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছা। এমনি প্রস্রাব ধারন করার ক্ষমতাও থাকে না। যকৃত দোষে বহুমুত্র। মুত্রথলিতে বায়ুর চাপের জন্য পুনঃ পুনঃ মুত্র ত্যগের ইচ্ছা। মুত্রথলির প্রদাহ। প্রস্রাবকালে জ্বালা, প্রস্রাব থেকে থেকে বন্ধ হয় ও কোথানি দিতে হয়। সহবাসের পর মুত্রথলিতে জ্বালা, চুলকানী ও ঘন ঘন প্রস্রাব ত্যগের ইচ্ছা। কৃমি জনিত শয্যামুত্র। ইউরিমিয়া বা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যদি মুত্রবিকার হয়।, চোখ-মুখ লাল বর্ণ দেখায় তবে নেট্রাম ফস সুনির্বাচিত হয়। ঐ সঙ্গে জ্বর থাকলে ফেরাম ফস পর্যায়ক্রমে দিতে হবে। মুত্র পাথরী, নেফ্রাইটিস, রাইটস ডিজিজ ইত্যাদিতে এবং প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে নেট্রাম ফস প্রয়োগ অবশ্য কর্তব্য।
✴️১০) পুংজননেন্দ্রিয়ের পীড়াঃ- ডাঃ সুসলারের মতে প্রমেহ পীড়ায় এটাই প্রধান ঔষধ। অনেকে কেলিমিউরকেই প্রমেহের শ্রেষ্ঠ ঔষধ বলেন। হরিদ্রাবর্ণের গাঢ় স্রাবযুক্ত প্রমেহ রোগে নেট্রাম ফসই অদ্বিতীয়। স্বপ্নবিহীন স্বপ্নদোষ, সহবাসের পরে পুরুষাঙ্গ ও মুত্রে জ্বালা করে ও চুলকায়। শুক্র যে যে স্থানে লাগে সেখানেও চুলকায়। স্ত্রী সহবাসের পরও স্বপ্নদোষ এবং বিনা স্বপ্নে অজ্ঞাতে বীর্য নিঃসরণ হওয়া বিশেষ লক্ষণ।
⏭️ হ্রাসঃ- অনেক লক্ষণ আহারের পর হ্রাস পায়।
⏭️ বৃদ্ধিঃ- সহবাসে, তৈলাক্ত, দুগ্ধ ও মিষ্টিদ্রব্য সেবনে, বমনে গরম গৃহে, খোলা বাতাসে ইত্যাদি।
⏭️ শক্তিঃ- ডাঃ সুসলার এর ৬X বিচুর্ণ বা দ্রবীভূত করে ব্যবহার করতে উপদেশ দিয়েছেন। ডাক্তার কুইসের মতে ৪X বিচুর্ণ ভাল। ডাক্তার মরগ্যান ঘন ঘন, অল্প সময় অন্তর ৩০ শক্তি ব্যবহার করতে বলেছেন।
সৈয়দ হোমিও হল ফরেস্ট রোড আলিয়া মাদ্রাসা মার্কেট শেরপুর বগুড়া
01721418696ইমু