উচ্চ শক্তির হোমিও ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতা
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
অনেকেরই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমপর্কে ভুল ধারণা
আছে। ইহার জন্য দায়ী হাতুড়ে হোমিও ডাক্তারদের
ব্যর্থতা এবং এলোপ্যাথিক ডাক্তারদের অপপ্রচার।
বিশেষত এলোপ্যাথিক ডাক্তারদের কেউ কেউ বলে
বেড়ান যে, হোমিও ঔষধ হলো স্রেফ পানি। অর্থাৎ
হোমিওপ্যাথিক ঔষধের ভালো-মন্দ কিছুই করার
ক্ষমতা নেই। আমরা সাধারণ মানুষও অনেক সময় ভাবি
না যে, একটা লোক যে সাবজেক্টে কথা বলছে, সেই
বিষয়ে তার পান্ডিত্য আছে কি না ? যেই বিষয়ে কেউ
বিশেষজ্ঞ নয়, সেই বিষয়ে তার কথা বলার অধিকার আছে
কি ? অনেক অর্ধশিক্ষিত হোমিও ডাক্তাররাও প্রচার
করেন যে, হোমিও ঔষধের কোন সাইড ইফেক্ট নেই।
তারা হয়ত ভাবেন যে, এতে হোমিওপ্যাথির সুনাম বৃদ্ধি
পাবে; কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে উল্টো। সচেতন লোক
মাত্রই মনে করবে যে, যার সাইড ইফেক্ট নেই, তার
নিশ্চয় কোন ইফেক্টও নেই। অথচ হোমিও ঔষধ
এতটাই যাদুকরী ক্ষমতাসমপন্ন যে, লক্ষ টাকার
এলোপ্যাথিক ঔষধ খেয়েও যে রোগী ভালো হয় নাই,
মাত্র পঞ্চাশ পয়সার হোমিও ঔষধেই সেই রোগী
সুস্থ হতে দেখা যায়। আবার অনেকেই জানেন যে, লাখ
টাকার অপারেশনেও যে রোগ নির্মুল হয় না, অনেক সময়
পাঁচ টাকার হোমিও ঔষধেই তা আরোগ্য হয়ে যায়।
কাজেই যে ঔষধে এতটা উপকার হয়, সেই ঔষধের ভুল
প্রয়োগে ক্ষতিও ততটা মারাত্মক হওয়াই স্বাভারিক।
সে-যাক, কেউ স্বীকার করুক আর না করুক,
হোমিওপ্যাথি একটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা
পদ্ধতি। হোমিওপ্যাথি কোন তত্ত্বীয় বিজ্ঞান নয়;
বরং সম্পূর্ণ ব্যবহারিক বিজ্ঞান বা এপ্লাইড সাইন্স।
হোমিওপ্যাথির জনক জার্মান চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান প্রথম আবিষ্কার করেন যে, একই
ঔষধ অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ এবং সুস্থ ব্যক্তিকে
অসুস্থ করতে সক্ষম। হোমিও ঔষধ সরাসরি রোগের
বিরুদ্ধে ক্রিয়া করে না; বরং রোগীর জীবনী শক্তি বা
রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে উত্তেজিত করা এবং তাকে
শক্তি যোগানোর মাধ্যমে রোগ নির্মূল করে থাকে।
ফলে নিম্নশক্তির ভুল হোমিও ঔষধ কেউ খেলে জীবনী
শক্তি তার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াকে সহজেই সামাল দিতে
পারে। অর্থাৎ নিম্নশক্তির ভুল ঔষধ খাওয়াতে বড়
ধরনের ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু
নিম্নশক্তির ভুল ঔষধও যদি কেউ দীর্ঘদিন খেতে
থাকেন, তাহলে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা
আছে। পক্ষান্তরে উচ্চশক্তিতে কোন ভুল ঔষধ যদি
একমাত্রাও খেয়ে ফেলেন, তাতেও বড় ধরণের ক্ষতি
হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ভুল ঔষধ মানে যে ঔষধ আপনার
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কিংবা যে ঔষধের লক্ষণ
আপনার মধ্যে নেই। সাধারণত ২০০ শক্তির উপরের
শক্তিকে উচ্চ শক্তি ধরা হয়ে থাকে, যেমন- ১০০০
(ওয়ান এম), ১০০০০ (টেন এম), ৫০০০০ (ফিফটি এম),
১০০০০০ (সি এম) ইত্যাদি।
বিষয়টি সকল ঔষধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও তাদের
মধ্যে কয়েকটি ঔষধ আছে যেগুলোর ভুল প্রয়োগে
সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হতে দেখা যায়; যেমন- সালফার,
ল্যাকেসিস, জিংকাম মেটালিকাম, ফসফরাস, আর্সেনিক,
সিলিসিয়া, গ্রেফাইটিস প্রভৃতি। সাধারণ হোমিও
ডাক্তাররা দিলেও উচ্চশক্তির ঔষধ সেবন করা উচিত
নয়। একমাত্র বিশেষজ্ঞ হোমিও ডাক্তাররা
প্রেসক্রাইব করলেই উচ্চশক্তির ঔষধ নিশ্চিন্তে খেতে
পারেন। কারণ হোমিও ঔষধ কোনটি কোন রোগীর
জন্য সঠিক ইহা নির্ধারণ করা খুবই জটিল কাজ যা
হোমিওপ্যাথিতে প্রচণ্ড দক্ষতা থাকলেই নির্ভুলভাবে
করা সম্ভব। অনেকেই এমন আছেন যারা হোমিওপ্যাথির
ওপর দুয়েকটা বাংলা বই পড়েই নিজের বা পরিবার-
প্রতিবেশীর ওপর ডাক্তারী শুরু করে দেন এবং ছোট-
খাটো অসুখে উচ্চশক্তির ঔষধ খেতে আরম্ভ করে
দেন। এই ধরণের অপরিণামদর্শীতার কারণে আপনি এমন
মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হবেন যা থেকে পৃথিবীর
কোন ডাক্তার আপনাকে মুক্ত করতে পারবে না।