dr adnan sami .amar homoeo .com 01721418696
অন্ত্রের অসুখ আইবিএস নিরাময়ে হোমিওপ্যাথি
—————++————-++++———–++++————
যে কোনো ধরনের চর্বির (প্রাণিজ অথবা ভেজিটেবলজাত) এক ধরনের শক্তিশালী সংকোচন সৃষ্টি করে কোলনের পেশিতে। অনেক ধরনের খাদ্যই ফ্যাট আছে। যেমন সব ধরনের মাংস, দুধ, ক্রিম ও বাটার ইত্যাদি।
অন্ত্রের অসুখ ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম (আইবিএস) নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োগ সংকেত নিয়ে আজকের নিবন্ধ
ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম কি :
ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম বা আইবিএস বলতে কতগুলো উপসর্গের সমষ্টিকে বুঝায় যা খাদ্যনালীর স্বাভাবিক কার্যকারিতার ব্যাঘাত ইঙ্গিত করে। যদিও খাদ্যনালীতে কোনো প্রমাণযোগ্য জৈবিক রোগ থাকে না। পেটে গ্রহণ করা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্য দিকে আইবিএস-এর উসর্গগুলো প্রথম বর্ণিত হয়। নরমালি বৃহদন্ত (কোলন) থেকে মিউকাস সিক্রিশন হয়। টেনশনে এই সিক্রিশন বাড়তে পারে। তাকে ভুল করে রোগীরা ক্রনিক আমাশয় ভাবেন। সত্যি বলতে কি আজকাল ক্রনিক আমাশয় প্রায় দেখা যায় না। তার বদলে টেনশনজনিত কারণে পায়খানায় অতিরিক্ত আম পড়ে যার আর এক নাম ইরিটেবল বাওল সিনড্রোম (আইবিএস)। এই রোগে অন্ত্রের স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায। তাই রোগীর গ্যাস, ঢেঁকুর, পেটভার, পায়খানা পরিষ্কার না হওয়া ইত্যাদি হয়। এ রোগ সারাজীবন চলে। এটা না আলসার, না ক্যান্সার, না টিবি। মনের চাপ কমিয়ে চিকিৎসকের উপযুক্ত পরামর্শ নিয়ে এ রোগেও ভালো থাকা যায়। ইরিটেবল বাওল সিনড্রোমকে আগে নানাভাবে নাম দেয়া হয়েছিল। বলা হতো কোলাইটিস, মিউকাস কোলাইটিস, স্পাস্টিক কোলন অথবা স্পঙ্কি বাওল।
কোনো নামই সঠিক ছিল না :
কারণ কোলাইটিস বলতে বোঝায়, কোলন বা বৃহদন্ত্রের প্রদাহ কিন্তু আইবিএসে কোনো প্রদাহের লেশমাত্র পাওয়া যায় না। আবার অন্ত্রের আর একটি ভয়াবহ শারীরিক রোগ রয়েছে যার নাম আলসারেটিভ কোলাইটিস বা কোলনের রোগ। সুতরাং বিভ্রান্তির অবকাশ নেই, আইবিএসকে অন্ত্রের আলসারের সঙ্গে মেলানো যাবে না।
কিভাবে আইবিএস ঘটে থাকে :
প্রকৃতপক্ষে কী কারণে আইবিএস রোগটি সৃষ্টি হয় তার কারণ জানা নেই। তবে প্রমাণ পাওয়া গেছে দ্ব›দ্ব, মানসিক চাপ ইত্যাদি মনোগত বিষয় মলত্যাগের দ্রুতগতি নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ কোনো খাবার খেলেও টয়লেটে ছোটার প্রয়োজন হয়, তবে আইবিএসের কারণ হতে পারে কিনা এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেননি।
অন্ত্র সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা করা যাক :
(১) এটি পরিপাকতন্ত্রের একটি অংশ, টিউবের মতো, ৬ ফুট লম্বা ক্ষুদ্রান্ত এবং মলাশয়ের মধ্যে সংযোগকারী টানেল। কোলনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো লবণ ও পানি শোষণ করা। প্রতিদিন প্রায় দুই-চতুর্থাংশ খাদ্য তরল অবস্থায় ক্ষুদ্রান্ত থেকে কোলনের ভেতর প্রবেশ করে, যতক্ষণ পর্যন্ত লবণ ও পানি শোষিত না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এখানে থাকে। নানা প্রক্রিয়ার ফলে মল সৃষ্টি হয়, যা একটি বিশেষ গতিময়তার মাধ্যমে কোলনের ভেতর দিয়ে ডান দিক থেকে বাম দিকে অগ্রসর হয় এবং পরবর্তীতে সংকেত সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এখানে জমা থাকে।
(২) অন্ত্রের পেশির সংকোচন এবং এর মধ্যস্থিত অগ্রসরমান খাদ্যপিণ্ডের কারণেই বিশেষ ধরনের একটি গতিময়তা সৃষ্টি হয়। এই গতিময়তা স্নায়ু হরমোন এবং কোলনের বৈদ্যুতিক সিগন্যালের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। ইলেকট্রিক সংকেত হার্টের পেসমেকারের মতো কাজ করে। কোলনের এই গতিময়তা খাদ্যপিণ্ডকে সামনে পেছনে নাড়াচাড়া করে এবং অবশেষে বিপাকীয় খাদ্যগুলো মলাশয়ে এসে জমা হয়। সংকেতের মাধ্যমে মল হিসেবে মলদ্বার দিয়ে নির্গত হয়। মৃদু উত্তেজনার কারণে কোলনের পেশিতে সংকোচন সৃষ্টি হয় এবং আইবিএস শুরু হয়। যাদের কোলন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল তারাই আইবিএসে অধিক ভুগে থাকে।
কোনো কোনো খাবার বিশেষ করে মলাশয়ের পেশিতে সংকোচন সৃষ্টি করে থাকে, সংকোচনই মলত্যাগে বিলম্ব ঘটাতে পারে, কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হয়। অনেক সময় চকোলেট, দুগ্ধজাত খাদ্য, অতিরিক্ত মদ্যপান খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। মহিলারাই বেশি ভুগে থাকে আইবিএসে। পিরিয়ডের সময় সমস্যা বেড়ে যায়। ধারণা করা হয় প্রজনন হরমোন আইবিএসের মাত্রা বাড়িয়ে থাকে।
খাদ্য ও মানসিক চাপ কিভাবে প্রভাবিত করে :
আইবিএস খাওয়ার পর কোলনে সংকোচনের সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত খাবার গ্রহণের আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে মলত্যাগের সংকেত সৃষ্টি হয়। তবে আইবিএসের ক্ষেত্রে অতি দ্রুতই খিঁচুনি-ব্যথা এবং লুজমোশন হতে পারে। প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা নির্ভর করে কতটুকু ক্যালরি কিংবা খাদ্যে কতটুকু চর্বি গ্রহণ করা হয়েছে তার ওপর। যে কোনো ধরনের চর্বির (প্রাণিজ অথবা ভেজিটেবলজাত) এক ধরনের শক্তিশালী সংকোচন সৃষ্টি করে কোলনের পেশিতে। অনেক ধরনের খাদ্যই ফ্যাট আছে। যেমন সব ধরনের মাংস, দুধ, ক্রিম ও বাটার ইত্যাদি।
মানসিক চাপের কারণে আইবিএস রোগীর কোলনের সংকোচন উদ্দীপ্ত হয়। এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না, বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন যে, কোলন অংশত স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আইবিএস ব্যক্তিত্বের সমস্যাজাত কোনো রোগ নয়, বরং বলা যেতে পারে মলাশয়ের গতিময়তার সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় জড়িয়ে আছে রোগটির সাথে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন :
কোন ধরনের খাদ্য সমস্যা সৃষ্টি করে, চিহ্নিত করতে হবে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। দুগ্ধজাত খাদ্য উপসর্গের তীব্রতা বাড়িয়ে তোলে, এটি কম খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। দই ভালো ফল দেয়। দধিতে ল্যাকটেজ এনজাইম আছে, এটি দুগ্ধজাত খাদ্যের লাকটেজ সুগার বিপাকে সাহায্য করে। আঁশযুক্ত খাবার উপসর্গ লাঘবে সহায়তা করে থাকে।
যোগাসন :
আইবিএসে এই আসনগুলো অভ্যাস করা যেতে পারে। যেমন- পদহস্তাসন, ময়ূরাসন, বৃক্ষাসন, অর্ধকুর্মাসন, পশ্চিমোত্তাকাসন, উত্থিত পদাসন, বজ্রাসন, শবাসন ইত্যাদি।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান :
এই উপসর্গের জন্য প্রয়োজন আশ্বস্ত করা, সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা, বিহেবিয়ার পদ্ধতি এবং বিষণœতা বিরোধী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। কেস হিস্টির মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিতে এ সমস্ত দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসা সম্ভব। মূল কথা স্ট্রেস কমাতে হবে, হাস্যোজ্জ্বল সুন্দর জীবন চালিত করতে হবে। নিম্নে লক্ষণ সাদৃশ্যে কিছু ওষুধের নাম প্রদত্ত হলো। যথা : ১) ইগ্নেসিয়া ২) ওপিয়ম ৩) স্ট্যাফিসেগ্রিয়া ৪) কেলিফস ৫) মার্কসল ৬) লাইকোপোডিয়াম ৭) কার্বোভেজ ৮) পালসেটিলা ৯) কোনিয়ম ১০) এসিড ফস ১১) এসিড সালফ ১২) এন্টিম ক্রুড ১৩) নাক্সভমিকা ১৪) সালফার উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আরো অনেক ফলদায়ক ওষুধ আছে। তারপরেও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ওষুধ সেবন করা উচিত।www.amarhomoeo.com