সোরিক মায়াজমেটিক অবস্থার নির্দেশিকা/অ্যান্টি-সিফিলিটিক ওষুধসমূহ (Anti-Syphilitic Remed//
আপনি যখন পাস করে একটি চেম্বার দিয়ে বসবেন তখন বিশাল একটি আত্নবিশ্বাস আর সব রোগীকেই সুস্থ্য করতে পারবো এরূপ মানষিকতা নিয়ে শুরু করবেন। প্রথমে আপনার কাছে আসবে ছোট ছোট সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগী। আপনি মোটামুটি মেটেরিয়া জ্ঞান আর রেপার্টরী করে বেশ রোগী দেখছেন। আপনি তাদের কাউকে হয়তো সুস্থ্য করছেন বা কাউকে উপসম দিচ্ছেন। আপনার আত্নতৃপ্তি ঘটছে এবং আত্ন বিশ্বাস বাড়ছে। কিছুদিনে বেশ অনেকেই জেনেছে আপনি ডাক্তার হিসেবে খারাপ না। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন জটিল রোগী আপনার কাছে আসতে শুরু করছে, তাতে আছে অনেক জটিল রোগী যারা অনেক ডাক্তারের চেম্বারে ব্যর্থ হয়ে এসেছে। আপনি অনেক চেষ্টা করেও পারছেন না তাদের আরোগ্য করতে, আরোগ্য তো দুরে থাক অনেকের অবস্থা আরো বেশী খারাপ হয়ে গেছে আপনার চিকিৎসার কারনে। আপনার আত্নবিশ্বাসে চির ধরেছে। আপনার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তখন কি করবেন আপনি? চেম্বার বন্ধ করে দেবেন? ডাক্তারী ছেড়ে দেবেন? নাকি নিজের অযোগ্যতাকে বয়ে বেড়াবেন? নাকি মিক্সডপ্যাথি শুরু করবেন?
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মুলমন্ত্রই হলো মায়াজম। মায়াজম জ্ঞান ছাড়া যেমন চিররোগের চিকিৎসা করা যায় না তেমনি মায়াজম জ্ঞান না থাকলে কাউকে প্রকৃত হোমিওপ্যাথ বলা যায় না। কিন্তু সেই জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা কয়জন করে বা কয়জন অর্জন করতে পেরেছে সেই জ্ঞান। আসুন আমরা হোমিওপ্যাথরা মায়াজম জ্ঞানে সমৃদ্ধ হই। মানুষের সেবায় নিজেদের অধিকতর যোগ্য করি। পালিয়ে না বেড়িয়ে আজ থেকেই মায়াজমের মায়ায় আমরা নতুনভাবে নিজেদের উদ্ভাষিত করি।
সোরিক মায়াজমেটিক অবস্থার নির্দেশিকা –
(Indications of Psoric Miasmatic States):
ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে সোরার উপস্থিতি ও তার লক্ষণাবলী নির্ণয়।
১ম লক্ষণ : অত্যানুভূতি। অস্বাভাবিক সংবেদনশীলতার জন্য একে সংবেদনশীল রোগ বীজ বলা হয়। সোরা মূলতঃ অনুভূতি ও কার্যকলাপে বিশৃঙ্খলতা আনে।
২য় লক্ষণ : সোরিক জাতীয় মানুষগুলো বহির্বিশ্বে (কল্পনারাজ্যে) বিচরণ করে। তিনি যা ভাবেন তা বাস্তবায়িত করতে পারেন না। তাকে উৎকট বা বন্ধ্যা দার্শনিক বলা যায়। সূতরাং সোরার দ্বিতীয় ইঙ্গিত হলো- মন সম্পূর্ণ বাহ্যিক পরিকল্পনায় পূর্ণ, তিনি পুরোদস্তুর তাত্ত্বিক, বিন্দুমাত্রও ব্যবহারিক নন। বাস্তব জ্ঞানের অভাব।
৩য় লক্ষণ : অস্থিরতা। শান্ত হয়ে থাকলে বা বিশ্রামে সে শান্তি পায় না। সবসময় ব্যস্তবাগিশ।
৪র্থ লক্ষণ: সোরার চরিত্রই হলো সবসময় পরিবর্তনশীলতা। সে শুধু পরিবর্তন হতেই চায় না, সবসময় নতুন জিনিস কামনা করে।।
৫ম লক্ষণ : আত্মকেন্দ্রিক। অত্যন্ত কৃপণ ও স্বার্থপর। কারও প্রতি কোনও ভালবাসা বা সমবেদনা নেই। সোরিক রোগীদের কোনও আবেগ নাও থাকতে পারে।
৬ষ্ঠ লক্ষণ : গোপন করা ও তল্লাশি করার প্রবৃত্তি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সোরিক রোগীরা অসৎ হয়। গোপনীয়তায়, অন্যের অনিষ্ট করতে, ভেজাল দিতে সে রপ্ত।
৭ম লক্ষণ : অত্যন্ত অসুস্থ থাকলেও মনে করে তার কিছুই হয়নি। সুস্থ হতে চায় না।
৮ম লক্ষণ : নোংরা ও ভীরু প্রকৃতির। সহজেই ভয় পেয়ে যায়। উদ্যমহীন। অনেকসময় ধীর স্থির।
৯ম লক্ষণ : সমস্ত শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির আরক্তিমতা।
১০ম লক্ষণ : যেখানে সোরা সেখানে চর্মরোগ থাকবেই। যদি চর্মপীড়া বর্তমান নাও থাকে- অতীত ইতিহাসে সোরা জাতীয় চর্মরোগ থাকবেই।
১১শ লক্ষণ : সোরার সবধরনের ব্যথা-যন্ত্রণা স্নায়বিক। হাড়ের ব্যথা সিফিলিসকে এবং সন্ধির ব্যথা সাইকোসিসকে নির্দেশ করে।
ঢেউ খেলানো, মোচড়ানো ব্যথা সোরার, জ্বালাকর বা ভেঙে যাওয়ার মত ও বিদীর্ণকর ব্যথা সিফিলিটিক, সুই ফোটার মত স্পন্দনশীল, ভ্রমণশীল ব্যথা সাইকোসিসকে নির্দেশ করে।
১২শ লক্ষণ : সোরার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো স্নায়বিক দুর্বালতা। সুতরাং যেখানে স্নায়ুতন্ত্রের আক্রান্ত হয়েছে লক্ষ্য করবো তখন সোরাকে স্মরণ করবো।
১৩শ লক্ষণ : সোরার রোগীদের দাড়িয়ে থাকা কষ্টকর। সুতরাং যখন দেখবো, রোগীর দাঁড়ানো অবস্থায় তার কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে তখন বুঝতে হবে এর পিছনে সোরা আছে।
১৪শ লক্ষণ : প্রাকৃতিক স্রাবে উপশম সোরার আরেক রূপ।
১৫শ লক্ষণ : ‘অসম্পূর্ণতা অথবা অপর্যাপ্ততা’ অথবা ‘ঘাটতি অথবা কমতি’ সোরার মূল নির্দেশিকা। সততার অভাব, তেজীভাব, স্রাব, উদ্ভেদ সোরার অন্যতম প্রতীক। অধিকাংশ অভাবজনিত রোগের উৎস হলো সোরা। সোরা প্রদাহ সৃষ্টি করে।
১৬শ লক্ষণ : জিহ্বায় পোড়া স্বাদ সোরার আরেক নির্দেশক। পোড়া স্বাদ শুধুমাত্র সোরিক। মিষ্টি স্বাদ, স্বাদহীনতা এবং চটচটে আঠালো স্বাদ সোরার চিহ্ন। আমরা জানি, মুখে তামাটে বা ধাতব স্বাদ সিফিলিটিক এবং পচা, বাসী অথবা আঁশটে স্বাদ সাইকোটিকের নির্দেশক।
স্বাদ হলো নিরপেক্ষ, যেখানে বিকৃতস্বাদ সেখানে মায়াজমেটিক ভিত্তি থাকবেই।
১৭শ লক্ষণ : জ্বালাপোড়া সোরার প্রধান লক্ষণ। জ্বালা মাথার তালুতে, পায়ের পাতায়, হাতের তালুতে কিংবা সমস্ত শরীরে। শীতল আবহাওয়ায় ভাল থাকে কিন্তু, ঠাণ্ডা জলে বা স্নান করার পর রোগী শীত অনুভব করে, কারণ রোগীরা সাধারণত শীতার্ত হয়। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে অধিকাংশ সোরার রোগীরা গরম কাতর হয়, স্নান করতে চায় এবং স্নানের পর শরীর তাজা লাগে।
১৮শ লক্ষণ : সোরার ভীষণতা বা সাংঘাতিক অবস্থাদি (Malignancies) চল্লিশ বছর বয়সে আরম্ভ হয়ে থাকে। সিফিলিসের সাংঘাতিক অবস্থাও চল্লিশ বছর বয়সে শুরু হয়। সাইকোসিসের ম্যালিগন্যান্সী যে কোনও বয়সে দেখা দেয় বা দেখা দিতে পারে।
১৯শ লক্ষণ : সোরা চুলকানি প্রকাশ করে, সিফিলিস অত্যন্ত বিষাক্ত ঘা বা ক্ষত বের করে এবং সাইকোসিস শ্লেষ্মাযুক্ত স্রাব প্রকাশ করে। চুলকানি ও জ্বালাযুক্ত রুগ্ন চামড়া সোরা, পুঁজ-রক্ত যুক্ত ক্ষত ছাড়া সিফিলিসের এবং ঘন পিচ্ছিল ও প্রচুর পরিমাণ ঘামযুক্ত তৈলাক্ত চর্ম সাইকোসিসের প্রতীকী।
২০ম লক্ষণ : সোরাকে চাপা দিলে তা স্নায়ুতন্ত্র বা স্নায়ুকেন্দ্রকেই আক্রমণ করে। ফলে ভয়ঙ্কর রকমের স্নায়বিক রোগ বা মানসিক রোগ দেখা দেয়। চিকিৎসায় চর্মরোগ বহিঃপ্রকাশ হলে ঐসব রোগ প্রশমিত হয়।
অন্যান্য নির্দেশ :
লঘু আণবিক ওজনের উপাদানসমূহ যা পুষ্টির উপাদানের সাথে সম্পর্কিত সেসবের বিপাক ক্রিয়ায় সোরা বিঘ্ন ঘটায়। সবধরনের Hypo’ দিয়ে শুরু শব্দগুলি অর্থাং অল্প, অভাব, লঘু, স্বল্পতা ইত্যাদি শব্দার্থিক উপাদানগুলি মূলত সোরিক।
সব ‘Dyses’ অর্থাৎ অক্ষমতা, অনিয়মিত, অপূর্ণ, অসমতা, কষ্টকর, জড়তা, বৈকল্য, ত্রুটিপূর্ণ ইত্যাদি শব্দার্থিক উপাদানগুলি মূলতঃ সিফিলিটিক।
Hyper’ অর্থাৎ আধিক্য, আতিশয্য, অতি, অস্বাভাবিক ভাবে বর্ধিত, অত্যধিক মাত্রায় ইত্যাদি শব্দার্থিক উপাদানগুলি মূলতঃ সাইকোটিক।
যেমন- Hypoplasia অর্থাৎ হাল্কা গঠন হলো সোরিক এবং Dysplasia বা গঠন কৃষ্টতা হলো সিফিলিটিক ও Hyperplasia বা গঠনপুষ্টতা বা মোটা গঠন হলো সাইকোটিক।
Arophy – সর্বাঙ্গের শীর্ণতা বা ক্ষীণতা অর্থাৎ অপুষ্টি হলো সোরিক, Dystrophy অর্থাৎ পুষ্টিদুষ্টতা ৰা অসম্পূর্ণ পুষ্টি হলো সিফিলিটিক এবং Hypertrophy অর্থাৎ অতিবৃদ্ধি বা অতিপুষ্টি হলো সাইকোটিক।
রক্তচাপ কমে যাওয়া সোরাকে, অনিয়মিত কিছু হলে সিফিলিসকে এবং উচ্চ রক্তচাপ সাইকোসিসকে নির্দেশ করে।
অভাব বা ঘাটতি (Lack) সোরাকে বুঝায়, বিকৃত বা বিপদগামিতা (Deviation) সিফিলিসকে এবং অতিবৃদ্ধি বা আধিক্য (Exaggeration or Excess) সাইকোসিস বুঝায়।
দুর্বলতা বা শক্তিহীন (weakness)- সোরা, পেশীর অসমক্রিয়া (Atoxin) হলো সিফিলিটিক এবং অস্থিরতা বা অস্বচ্ছলতা (Restless) হলো সাইকোসিস।
সোরার স্বভাব বাধা দেওয়া, সিফিলিসের ধ্বংস বা বিনষ্ট করা এবং সাইকোসিসের ব্যয় করা।
সোরার প্রবণতা হলো সমস্ত গঠনমূলক উপাদানগুলির বিপাকক্রিয়ায় বাধা দিয়ে শরীরের পুষ্টিকে বিনষ্ট করে রোগীকে ক্ষয়ের পথে ঠেলে দেওয়া।
উপত্বকের (Ectodernal) কলা বা তন্তুকে আক্রমণ করতে সোরা পছন্দ করে।
সোরার নীল, হাল্কা স্নিগ্ধ রং। সাইকোসিসের হলুদ, জমকালো এবং সিফিলিসের লাল রং।
ভীরুতা সাধারণত সোরিক প্রকৃতির, কৃত্রিম আচরণ বা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন লোক সাইকোটিকের এবং হত্যা করার প্রবৃদ্ধি থাকে সিফিলিটিক প্রকৃতির রোগীদের।
অন্ত্ৰে কৃমিসদৃশ মৃদু ক্রিয়া হলে সোরিক, দ্রুত বা অত্যধিক হলে তা সাইকোটিক। কিন্তু যখন এটি আমাশাঘটিত আক্ষেপের মত বিপদগামী হয়ে যায় তখন তা সিফিলিটিক।
গ্রাভগল (Gauvogl)-এর তিনটি ভিত্তিতে নিম্নলিখিত তিনভাগে বর্ণনা করা যেতে পারে।
অতিরিক্ত কার্বন ও নাইট্রোজেন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কার্বো-নাইট্রোজেনয়েড গঠন হলো সোরার সমকক্ষ। অতিরিক্ত অক্সিজেন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অক্সিজেনয়েড গঠন সিফিলিসের এবং অতিরিক্ত হাইড্রোজেন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাইড্রোজেনয়েড গঠন হলে সাইকোসিসের সমকক্ষ।
কোষ্ঠবদ্ধতা মূলত সোরিক, উদরাময় সাইকোটিক এবং আমাশাঘটিত আক্ষেপপূর্ণ হলো সিফিলিটিক।
শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির শুষ্কতা সোরাকে, ক্ষরণ বা নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ার মত হলে তা সাইকোসিসকে এবং ক্ষত বা ধংসের দিকে যেতে থাকলে তা সিফিলিসকে নির্দেশ করে।
আমরা যদি উপরোল্লিখিত সোরার স্বরূপ বা লক্ষণাবলী বা নির্দেশাবলী ভাল করে উপলব্ধি করতে পারি এবং তা আয়ত্ত্বে আনতে পারি তবে সোরা প্রধান রোগীদের বুঝতে আমাদের অনেকটা সহায়ক হবে।
অ্যান্টি-সোরিক ওষুধাবলী (Anti-Psoric Remedies):
আমাদের মেটেরিয়া মেডিকায় শতাধিক অ্যান্টি-সোরিক ওযুধ আছে। কিন্তু নিম্নলিখিত ওষুধগুলো সাধারণত প্রথম শ্রেণীর (‘A’ Grade) সোরাঘ্ন ওষুধ :
আর্সেনিক এল্বাম, আর্সেনিক আয়োড, অ্যালোজ, এপিস মেল, হিপার, ল্যাকেসিস, লাইকোপোডিয়াম, নেট্রাম মিউর, নাইট্রিক অ্যাসিড, সোরিনাম, সেলেনিয়াম, সিপিয়া, সালফার, টিউবার, জিঙ্ক।
সাইকোটিক মায়াজমেটিক অবস্থার নির্দেশিকা-
(Indications of Sycotic Miasmatic States):
১ম লক্ষণ ; শরীরের কোষকলাসমূহের অসমন্বয় বা অসংযমী বা মাত্রাধিক্য বা সংখ্যাবৃদ্ধি হলো সাইকোটিকের মূল নির্দেশক।
২য় লক্ষণ : সন্দেহপ্রবণ মানসিকতা। মূলতঃ সন্দেহপ্রবণতা, ঈর্ষাপরায়ণতা, কোন কিছু গোপন করার স্বভাবের ফলেই চরম পর্যায়ের অপকর্ষ সৃষ্টি হয়।সবকিছু গোপন করতে চায়। কঠোর গোপনতা, কোপন স্বভাব। সাইকোটিক রোগীরা সবকিছু নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে। অপরাধপ্রবণতা ও অধিকাংশ আত্মহত্যার মূলে রয়েছে সোরা-সাইকোটিক দোষের যুগ্ম অবস্থান।
এখনকার দিনে যেসব নরনারীর আত্মহত্যার প্রবণতা আছে তারা মূলতঃ প্রমেহজাত। সব ধরনের রোগ বীজের মধ্যে ক্ষতিকারক হলো প্রমেহদোষ। এ রোগ বীজের সর্বদা ক্ষতিকর কাজ ও কুকর্ম করার প্রবণতা থাকে। প্রমেহর মন সম্পূর্ণভাবে অপকৃষ্টকারী। সব ধরনের অন্যায়পরায়ণতা প্রমেহরই সৃষ্টি। মিথ্যুক, প্রচণ্ড দুর্বত্ত, অন্যের প্রতি স্নেহ ভালবাসার চরম অভাব থেকেই স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা তৈরি হয়। পৃথিবীর চোর, ডাকাত, খুনী প্রভৃতি সমস্ত দুর্বত্তরা প্রমেহর সৃষ্টি। পাশবিক মানসিকতা তৈরি করে এ রোগবীজ।
ভুলো মন। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কথা স্মরণ করতে কষ্ট কিন্তু পুরনো ঘটনা হুবহু বর্ণনা করতে পারে। অন্যমনস্কতা।
বদ্ধমূল ধারণা। অলীক বিষয়ে অন্ধবিশ্বাস অথবা ধর্মীয় অনুরাগে বীতশ্রুদ্ধ।
খিটখিটে। বিরক্তি। ভয়। হতাশ, আরোগ্যে হতাশ, অসন্তুষ্টি, অনুতাপ।
সংক্ষেপে, প্রমেহজাত মানসিকতা হলো সন্দেহপ্রবণ, ক্ষতিকারক, নীচমনা, স্বার্থপর এবং ভুলো মন। যেন শরীরের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা হয়ে যাবে, যেন শরীরের অভ্যন্তরে কোনও জীবন্ত প্রাণী নড়াচড়া করছে সেরকম অনুভূতি।
৩য় লক্ষণ : সন্ধি ও সংযোজক কলাগুলি আক্রান্ত হয়।
৪র্থ লক্ষণ : আমরা সবাই জানি– সোরা চুলকনা, সিফিলিস উন্মুক্ত ঘা এবং সাইকোসিস সর্দিস্রাব প্রকাশ করে।
৫ম লক্ষণ : মলদ্বারের আঁচিল জাতীয় উদ্ভেদ। আঁচিল। তিল। অস্বাভাবিক মাংসল উদ্ভেদ, সব ধরনের অর্বুদ ও অর্বুদ জাতীয় বিবৃদ্ধি। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপবৃদ্ধি। দৈহিক বিকৃতি। এজন্য একে গঠনশীল মায়াজমও বলা হয়। গলগ্রন্থির অতিরিক্ত ক্ষরণ। বচরণ বা জন্মগতভাবে পায়ের বক্ৰগঠন ইত্যাদি। কেশগর্ভের প্রদাহপূর্ণ ফুস্কুড়ি। কাউর ঘা, দদ্রু- সেগুলি ফাটা ফাটা, তা থেকে আঠালো রস নির্গত হয়। চামড়া তেলতেলে। নাকের অগ্রভাগ লাল। ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। রক্তবহা নাড়ীর অর্বুদ।
৬ষ্ঠ লক্ষণ : স্বোপার্জিত গণোরিয়া বা বংশগত গণোরিয়ার ইতিহাস।
৭ম লক্ষণ : চুল মোটা ও অমসৃণ। মাথায় ও মুখমণ্ডলে ক্ষুদ্র টাক। অনাবশ্যক লোম।
নখ লম্বা, সরু চুড়া বিশিষ্ট। মোটা নখ পাতলা ও দাগযুক্ত নখ, বা নখে সাদা ফুটকি টিউবারকুলার মায়াজমের নির্দেশক। |
৮ম লক্ষণ : ধীর আরোগ্য সম্পন্ন, এমনকি তরুণ পীড়াও খুব ধীরে ধীরে আরোগ্য হয়।
৯ম লক্ষণ : হাঁপানি, হাঁপানির অতীত ইতিহাস, শ্বাসনালী সংক্রান্ত হাঁপানি বা গণোরিয়ার ইতিহাস।
১০ম লক্ষণ: চিরপ্রকৃতির বা দীর্ঘদিন যাবৎ ভুগতে থাকা প্রদাহ, বিশেষত সন্ধি প্রদেশগুলিতে প্রদাহ।
১১শ লক্ষণ: কাললনলীতে অবরুদ্ধতা বা প্রদাহ এবং জরায়ুর অবুর্দজনিত বন্ধ্যাত্বতা।
১২শ লক্ষণ: হঠাৎ যেকোনও তীব্র রোগের আক্রমণ।
১৩শ লক্ষণ: সমস্ত শরীরে অথবা কোনও একটি অঙ্গে স্ফীতি বা সর্বাঙ্গীণ শোথ। |
১৪ লক্ষণ: মুখশায়ী গ্রন্থির বিবৃদ্ধি। উপাঙ্গ প্রদাহ। রক্তাল্পতা।
১৫শ লক্ষণ: বৃদ্ধি- বিশ্রামে, বৃষ্টিতে বা বর্ষাকালে, সেঁতসেঁতে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ও জায়গায়। ভোর ৪টা থেকে ৬টায়, মধ্যদিন থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। ঠাণ্ডায়।
যখনই বৃষ্টি হয় তখন তার ব্যথা শুরু হয়ে যায়- এটা সাইকোসিসের একটি বড় নির্দেশিকা। যখন আবহাওয়া আর্দ্রতায় ভরে যায় তখন বৃদ্ধি। উপশম নড়াচড়ায়, কর্মরত অবস্থায়। গরমে।
প্রাকৃতিক নিঃসরণ ক্রিয়াগুলি যেমন— উদরাময়, খোলসা করে প্রস্রাব, এমনকি ঘাম নির্গত হলেও তার অবস্থার কোনও উন্নতি হয় না অথবা বৃদ্ধি হয়।
১৬শ লক্ষণ: সাইকোসিসের সাংঘাতিক অবস্থাদি যে কোনও বয়সে হতে পারে।’
১৭শ লক্ষণ: সাইকোসিস চাপা দেওয়া হলে, তা অভ্যন্তরিণ অঙ্গগুলিকে আক্রমণ করে, বিশেষত বস্তিকোটরীয় বা যৌন অঙ্গগুলিতে ভয়াবহ ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি হয়-তৈরি হয় আঙ্গিক বিবৃদ্ধি, ফোড়া, অর্বুদ জাতীয় অপকর্ষতা, শ্লেষ্মা থলিকা ইত্যাদি। সাইকোসিস মস্তিষ্কে আক্রমণ করলে সৃষ্টি হয় মাথাব্যথা, অচির প্রকৃতির ভয়াবহ বাতিকগ্রস্ততা, উন্মাদ, নৈতিক অধঃপতন, অসততা ইত্যাদি।
১৮শ লক্ষণ: প্রমেহদোষ স্বাভাবিক বিপাকতন্ত্রে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করে। বামনাকৃতি প্রকাশ, বিশেষ কোনও অঙ্গের শীর্ণতা, রক্তাল্পতা, গলগণ্ড সহ জড়বুদ্ধি ও শারীরিক বিকৃতি, জন্মগতভাবে গলগ্রন্থির নিঃসরণ ক্রিয়ার অভাবজনিত শারীরিক ও মানসিক খর্বতা এবং তামাটে চর্মপীড়া ইত্যাদি প্রমেহর সৃষ্টি। প্রমেহ সমস্ত বিপাকতন্ত্রের অসমন্বয় ঘটিয়ে মস্তিষ্ক থেকে হাড়— সর্বত্র অসম্পূর্ণতা সৃষ্টি করার প্রবণতা থাকে। প্রমেহদোষ অন্তঃত্বক কোষকলাকে আক্রমণ করে। ‘..
অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধসমূহ (Anti Sycotic Remedies):
নিম্নলিখিত ওষুধগুলো সাধারণত প্রথম শ্রেণীর (‘A’ Grade) অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ:
আর্জেন্টাম মেট, আর্জেন্টাম নাইট, মিউরিয়েটিক অ্যাসিড, ফ্লুরিক অ্যাসিড, কেলি সালফ, মেডোরিনাম, নেট্রাম মিউর, নেট্রাম সালফ, নাইট্রিক অ্যাসিড, সিপিয়া, স্ট্যাফিসেগ্রিয়া, থুজা।
সিফিলিটিক মায়াজমেটিক অবস্থার নির্দেশিকা-
(Indications of Syphilitic Miasmatic States):
১ম লক্ষণ : ধ্বংস অথবা বিকৃতি অথবা শিথিলতা অথবা অপকর্ষতা হলো সিফিলিসের প্রধান উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। রোগী ঠাণ্ডা মাথায় অতিসহজে নিজেকে বা যেকোনও মানুষকে বা বহু মূল্যবান কোনও বস্তুসামগ্রী ধ্বংস করে দিতে পারে। মনে হয় কোনও কিছু ধ্বংস করতে পারার মধ্যেই তার একমাত্র উচ্ছাস। পৃথিবীর সমস্ত ফ্যাসিস্ট, নৈরাজ্যবাদী ও শোষক সিফিলিসের সৃষ্টি।
২য় লক্ষণ : মানসিক দিক দিয়ে এরা নির্বোধ বা স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন, বোকা, খিটখিটে মেজাজের এবং প্রায়ই সন্দেহবাতিক হয়। বোধশক্তি আস্তে আস্তে ভোতা হয়ে যায়। অস্থিরতা। বদ্ধমূল ধারণা, অটল মেজাজ। ধীর প্রতিক্রিয়া বিশিষ্ট। জেদী।
বিষাদগ্রস্ত। অবসন্ন মন। রোগীরা অবসন্নতা চেপে রাখে। প্রথমেই আপনি শুনবেন–সে আত্মহত্যা করতে চায়। সংযতবাক। নৈতিকতার অবক্ষয়, অসাধু।
৩য় লক্ষণ : . যেখানে প্রধান অঙ্গগুলো যেমন মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, চোখ, অস্থি,অস্থি আবরণী আক্রান্ত হয়- জানবেন সেখানে সিফিলিসের মুখ্য ভূমিকা আছে।
৪র্থ লক্ষণ : ক্ষত, সিফিলিসের সবসময় মারাত্মক ধরনের উন্মুক্ত ক্ষত তৈরি করার প্রবণতা থাকে। আমরা জানি সোরা চুলকনা ও সাইকোসিস সর্দি প্রবণতা সৃষ্টি করে।
৫ম লক্ষণ: গ্ল্যান্ড ফোলা, প্রদাহযুক্ত এবং তাতে ক্ষত সৃষ্টি করার প্রবণতা।
৬ষ্ঠ লক্ষণ : বংশগত সিফিলিস রোগীদের চুল ও নখ পাতলা। টাক, সম্পূর্ণ টাক।
৭ম লক্ষণ : প্রাকৃতিক স্রাবে কোনও রকম উপশম হয় না বরং বৃদ্ধিই হয়। সোরিক রোগীদের প্রাকৃতিক স্রাবে উপশম হয় এবং সাইকোটিক রোগীদের বৃদ্ধি উপশম কিছুই হয় না।
৮ম লক্ষণ : সকল স্রাবে পচা বা বাজে দুর্গন্ধ।
৯ম লক্ষণ : বৃদ্ধি- রাতে বৃদ্ধি। গরমে, ঘামে এবং প্রাকৃতিক স্রাবেও বৃদ্ধি। উপসম- দিনের বেলায় এবং ঠাণ্ডায় উপশম। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরম অসহ্য।
১০ম লক্ষণ : চর্মের উদ্ভেদগুলিতে ক্ষত, ব্যথা, দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ-রক্ত থাকে, কিন্তু প্রায়ই চুলকানি থাকে না। চুলকানিবিহীন তামাটে চর্ম। গ্যাংগ্রীন। শল্কাযুক্ত উদ্ভেদ।
১১ম লক্ষন: ঠাণ্ডা খাদ্য-পানীয়ে আকাঙক্ষা। স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর সব ধরনের জিনিস যেমন মদ, সুরা, ধুমপানে আসক্তি। এখানেও ধ্বংসের লক্ষণ। প্রাণীজ খাদ্যে অনীহা। মনে রাখতে হবে, ধ্বংসাত্মক বৈশিষ্ট্যযুক্ত সিফিলিস যখন সক্রিয় থাকে তখন কোনও ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকে না।
১২শ লক্ষণ : মুখে তামাটে বা ধাতব স্বাদ। আমরা জানি, সোরায় পোড়া স্বাদ এবং পচা, বাসী অথবা আঁশটে স্বাদ সাইকোটিকের নির্দেশক।
স্বাদ হলো নিরপেক্ষ, যেখানে বিকৃতস্বাদ সেখানে মায়াজমেটিক ভিত্তি থাকবেই।
১৩শ লক্ষণ : রোগীর পারিবারিক ইতিহাসে যদি বীর্যে শুক্রকীটহীনতা, সন্তান ধারণে অক্ষমতা, মৃতবৎসা বা বার বার গর্ভপাত, অকালমৃত্যু অথবা মস্তিষ্ক বা হৃদপিণ্ডের আক্রমণে মৃত্যু, আত্মহত্যা, উন্মাদ, ক্যানসার, টিবি, সিফিলিস ইত্যাদির ইতিহাস পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে রোগীর সিফিলিস আছে বা থাকতে পারে বলে ধরে নিতে হবে।
১৪শ লক্ষণ : সোরার মত সিফিলিসেও সাংঘাতিক অবস্থাদি ৪০ বছর বয়সে আরম্ভ হয়। তবে সাইকোসিস যেকোনও বয়সে হয়।
১৫শ লক্ষণ : সিফিলিস চাপা পড়লে বা চাপা দেওয়া হলে তা মস্তিষ্কের আবরক ঝিল্লী, মস্তিষ্ক, ল্যারিংস, গলা, চোখ, অস্থি ও অস্থি আবরক ঝিলী আক্রমণ করে থাকে।
১৬শ লক্ষণ : আঙ্গিক বা কাঠামোগত পরিবর্তনাদির মত ধ্বংসকারী রোগগুলি যেমন- যকৃতের অবক্ষয়, ক্ষত জাতীয় ক্যান্সার, টি.বি., সাংঘাতিক রকমের রক্তহীনতা, মস্তিষ্ক আক্রান্ত হবার ফলে স্মৃতিশক্তির হ্রাস, কশেরুকা মজ্জার ক্ষয়রোগ, দেহের নালী বিশেষের সংকোচন, সাইনাস, ভগন্দর, উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্ক বা হৃদপিণ্ড আক্রান্ত ইত্যাদি সিফিলিসের নির্দেশক।
অন্যান্য লক্ষণ: সিফিলিসের দরুন খনিজ উপাদান সমূহের হজমে গোলযোগ বশতঃ বামনত্ব, রক্তহীনতা, শীর্ণতা, অস্থি ও দাঁতের গঠনে গোলমাল দেখা দেয়। সিফিলিসের প্রভাবে দেহের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান সমূহের পরিপাক ক্রিয়ায় গোলযোগ হয়ে মস্তিষ্ক থেকে অস্থি সর্বত্র অপুষ্টি ঘটতে পারে। সিফিলিস মধ্যাত্বক কলাসমূহের (Mesodermal tissue) কে আক্রমণ করে।
অ্যান্টি-সিফিলিটিক ওষুধসমূহ (Anti-Syphilitic Remedies):
নিম্নলিখিত ওষুধগুলো সাধারণত প্রথম শ্রেণীর (‘A’ Grade) অ্যান্টিসিফিলিটিক ওষুধ:
আর্সেনিক আয়োড, অরাম মেট, অরাম মিউর, অরাম মিউর নেট, ক্যালোট্রপিস, কার্বো এনি, কার্সিনোসিন, কেলি আয়োড়, কেলি সালফ, ল্যাকেসিস, মার্ক কর, মার্ক আয়োড ফ্লেবাম, মার্ক আয়োড রুবেরা, মার্ক সল, নাইট্রিক অ্যাসিড, ফাইটোলক্কা, সাইলিসিয়া, স্টিলিঞ্জিয়া, সিফিলিনাম, টিউবারকুলিনাম।